বিশ্বজুড়ে চলছে মহামারী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এই করোনা পরিস্থিতিতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে তথা ‘প্রক্টরড রিমোট এক্সামিনেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে বর্তমান অবস্থায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে ইউজিসি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এ মতামত তুলে ধরেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ইউজিসি।
পর্যালোচনা সভায় তারা বলেন, সফটওয়্যার দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার মতো সক্ষমতা দেশে এখনো তৈরি হয়নি। এই সফটওয়্যার দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। নেটওয়ার্ক ও টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন সঠিক নাও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের কোনো দেশে একটি সফটওয়্যার দিয়ে বড় পরিসরে পরীক্ষা নেওয়া হয় না। সফটওয়্যার দিয়ে যদি ভর্তি পরীক্ষা নিতে হয় সেক্ষেত্রে ইউজিসিকে একটি নীতিমালা প্রণয়ণ করে দিতে কমিটি সুপারিশ করে।
সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূর তার উদ্ভাবিত ‘প্রক্টরড রিমোট এক্সামিনেশন সিস্টেম’ সফট্ওয়্যারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এই সফটওয়্যারটি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এটি বর্তমান অবস্থায় অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য উপযোগী নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষার্থীদের বর্তমান অনলাইন কোর্সের পরীক্ষার মূল্যায়নে যে পদ্ধতিতে অনুসরণ করা হয় তার চেয়ে ‘প্রক্টরড রিমোট এক্সামিনেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যার অনেক বেশি ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে।
তাদের মতে, এই সফটওয়্যার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট্ট পরিসরে পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়নে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞ কমিটি ‘প্রক্টরড রিমোট এক্সামিনেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যারের অধিকতর উন্নয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
করোনা পরিস্থিতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষায় যে সফটওয়্যারটি ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, এ বিষয়ে ইউজিসি গত সপ্তাহে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এছাড়া, ইউজিসি চলতি শিক্ষাবর্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষারও উদ্যোগ নেয়।
সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে ১ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের প্রতি আহ্বান জানান। ইতোমধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও বুয়েট গুচ্ছ বা সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে সম্মত হয়েছে।
সভায় ইউজিসি চেয়ারম্যান ও কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।
কমিশনে অনুষ্ঠিত সভায় ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান, কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মোস্তফা আকবর, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেসের ডিন প্রফেসর মোস্তফা আজাদ কামাল, এডুকেন ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক সোহেল নাদিম রহমান শুভ, এটুআই এর টেকনোলজি এক্সপার্ট মো. ফজলে মুনীম, ওরেঞ্জ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শামীম হোসেন, ডিএসআই এর টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মুশরাফুল হক অনিক এবং হেড অব প্রোডাক্ট অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মইনুল ইসলাম অংশ নেন।