আগামী ১ নভেম্বর ষষ্ঠ-নবম শ্রেণির শিখনফল মূল্যায়ন শুরু

মহামারী করোনা কালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মাধ্যমিক পর্যায়ের (ষষ্ঠ থেকে নবম) শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে শিখনফল মূল্যায়ন সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত নির্দেশনা রোববার (২৫ অক্টোবর) সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবছর মাধ্যমিক স্তরের শ্রেণিগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না বলে গত ২১ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবার কোনো বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। সব শিক্ষার্থীই পরবর্তী ক্লাসে উঠবে। মূল্যায়ন যেন কোনো চাপ সৃষ্টি না করে। এজন্য ৩০ কর্মদিবসের একটি সিলেবাস তৈরি করা হবে। সিলেবাসটি পরবর্তী ক্লাসের শিখনফল অর্জনে সহায়তা করবে। ’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য ৩০ কর্মদিবসে শেষ করা যায়, এমন একটি সিলেবাস প্রণয়ন করেছে। সংশ্লিষ্ট শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক শিখনফলের গুরুত্ব বিবেচনা করে সিলেবাসটি এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যেন তা পরবর্তী ক্লাসের শিখনফল অর্জনে সহায়তা করে। ’

এরপর এ নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যক্ষ শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পাঠদান এবং স্কুল পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনলাইন শ্রেণি পাঠদান ও অন্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষকরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। এরকম নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখনফল অর্জন করলো, তা মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

‘এ মূল্যায়ন যেন তাদের ওপর কোনো মানসিক বা শারীরিক চাপ সৃষ্টি না করে, তাছাড়া শিক্ষকরা এবং শিক্ষার্থীরা নিজেরাও যেন তাদের পাঠ অগ্রগতি বা দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে, সেজন্য সার্বিক দিকগুলো বিবেচনা করে নির্দেশনা দেওয়া হলো। ’

১. এনসিটিবি থেকে নির্ধারিত মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য ৩০ কর্মদিবসের সিলেবাস অনুসরণ করতে হবে, যা মাউশির ওয়েবসাইটে (www.dshe.gov.bd) যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে।

২. এনসিটিবি সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় নির্ধারিত সিলেবাস থেকে অ্যাসাইনমেন্ট (নির্ধারিত কাজ) এর জন্য বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেছে। বিষয়বস্তু অনুযায়ী প্রণীত অ্যাসাইনমেন্ট (নির্ধারিত কাজ) মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিকট প্রতি সপ্তাহে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পাঠানো হবে।

৩. অ্যাসাইনমেন্ট (নির্ধারিত কাজ) প্রদান/গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান শ্রেণিভিত্তিক সময়সূচি নির্ধারণ এবং আলাদাভাবে প্রদান/গ্রহণের ব্যবস্থা করবেন। এক্ষেত্রে অনলাইনের সাহায্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিষ্ঠান প্রধান/অভিভাবক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অ্যাসাইনমেন্ট প্রেরণ ও গ্রহণ করবেন।

৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অ্যাসাইনমেন্ট (নির্ধারিত কাজ) ব্যতীত মূল্যায়ন সংক্রান্ত অন্য কোনো কার্যক্রম (যেমন- পরীক্ষা গ্রহণ, বাড়ির কাজ দেওয়া ইত্যাদি) গ্রহণ করতে পারবেন না।

৫. অ্যাসাইনমেন্ট (নির্ধারিত কাজ) মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করবেন এবং পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে সেগুলোর ওপর বিশেষ নজর দিয়ে কাঙ্ক্ষিত শিখনফল অর্জনের যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা শিক্ষকদের মূল্যায়নসহ অ্যাসাইনমেন্টগুলো (নির্ধারিত কাজ) সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন।

৬. কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে স্থানান্তরিত শিক্ষার্থীরা নিকটবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট (নির্ধারিত কাজ) সংগ্রহ/জমা দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অভিভাবক/শিক্ষার্থী তার নিকটবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

৭. এ কার্যক্রম ১ নভেম্বর থেকে শুরু হবে।

৮. এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সব আঞ্চলিক উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমন্বয় করবেন।

করোনা ভাইরাসের কারণে চলতি বছরে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি-জেডিসি এবং এইচএসসি ও সমানের পরীক্ষা বাতিলের পর মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Scroll to Top