বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আবারও সুযোগ

একসময় উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেতে পড়তে যাওয়াই ছিল বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ। কারণ, সেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনা শেষে দুই বছর কাজের সুযোগ ছিল। ২০১২ সালে অভিবাসন কমানোর কৌশল হিসেবে সেটি বন্ধ করে দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া থেকে ব্রিটেনে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যায়।

দীর্ঘ সাত বছর পর নিজেদের এই অবস্থান থেকে সরে এসেছে যুক্তরাজ্য সরকার। বিদেশি শিক্ষার্থী আকর্ষণে অভিবাসন নিয়ম শিথিল করেছে যুক্তরাজ্য। নতুন নিয়ম অনুযায়ী পড়াশোনা শেষে দুই বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁদের কর্মসংস্থানের ওপর বিধিনিষেধ থাকবে না। অর্থাৎ যেকোনো ধরনের চাকরি বা ব্যবসায় যুক্ত হতে পারবেন তাঁরা।

গত ১১ সেপ্টেম্বর দেশটির অভিবাসন বিভাগ এই নতুন নিয়ম ঘোষণা করে। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কোর্স সম্পন্নকারী বিদেশি শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ পাবেন। ২০২০ সালে যাঁরা পড়তে যাবেন, তাঁরা এই সুযোগটি পাবেন। দুই বছরের কাজের সুযোগ নিতে হলে অভিবাসনের নিয়মকানুন যথাযথভাবে মেনে চলে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা করতে হবে।

অভিবাসন নিয়ম বদলের ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘এই পরিবর্তনের ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা নিজেদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাবেন এবং যুক্তরাজ্যে নিজেদের কর্মজীবন শুরু করতে পারবেন।’ আর অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর) সাজিদ জাভিদ বলেন, ‘বহু আগেই সরকারের এই সুযোগ ফিরিয়ে আনা উচিত ছিল।’

যুক্তরাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ালেখার পর চাকরির সুযোগটি ‘পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক পারমিট’ (পিএসডব্লিউ) নামে পরিচিত। ২০১২ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসা মে অভিবাসন কমানোর কৌশল হিসেবে সেটি বন্ধ করে দেন। এর ফলে এখন পড়াশোনা শেষ করার চার মাসের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্য ছাড়তে হয়।

শিক্ষাপরামর্শ প্রদানকারী সংস্থাগুলো বলছে, যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা, জীবনযাপন কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ। ফলে পড়াশোনা শেষে যথেষ্ট সময় সেখানে না থাকতে পারায় এবং কাজের সুযোগ সীমিত করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য দেশটিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন ছিল।

বিদেশে উচ্চশিক্ষাবিষয়ক পরামর্শ প্রদানকারী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান মেইসেসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার রোহাম মঞ্জুর বলেন, ‘পড়ালেখা শেষে দুই বছর চাকরির বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। বিদেশে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরলে তা নিজেদের জীবনবৃত্তান্তে ইতিবাচক সংযোজন হবে।’

দুই বছর কাজ করলে যুক্তরাজ্যে পড়ালেখার খরচ অনেকটাই তুলে ফেলা যাবে বলে মনে করেন রোহাম মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী যদি দুই বছর ভালোমতো কাজ করেন, তাহলে তাঁরা সেই প্রতিষ্ঠানেই স্থায়ী চাকরি পেয়ে যেতে পারেন। ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী অভিবাসন করার সুযোগ চলে আসতে পারে।’

তবে যুক্তরাজ্যে পড়তে যাওয়া অনেক ব্যয়বহুল, এই বিষয়টি মানতে নারাজ শিক্ষাপরামর্শ প্রদানকারী সংস্থাগুলো। তারা বলছে, যুক্তরাজ্যে গ্র্যাজুয়েশন বা স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করতে তিন বছর লাগে, যেখানে আমেরিকা, কানাডাসহ অন্যান্য দেশে স্নাতক চার বছরের। ফলে যুক্তরাজ্যে এক বছরের খরচ কম লাগছে। আর যুক্তরাজ্যের অধিকাংশ রাজ্যে থাকার খরচ অনেক কম।

যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার খরচ নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেটি কোন শহরে অবস্থিত তার ওপর। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৃত্তি পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষায় যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, পরের দুই বছর কাজ করলে তা উপার্জন করা সম্ভব।

অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষাপরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্ররোচনায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে যান। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে যে ধারণা দেওয়া হয়, তার ছিটেফোঁটাও সেখানে থাকে না। শিক্ষাবিষয়ক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে যাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত, যেন ভবিষ্যতে প্রতারণার শিকার না হতে হয়।

যুক্তরাজ্যে ১৪০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যার মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় সরকার প্রণীত নীতিমালার আওতায়। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করার আগে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং দেখে নিতে পারেন সহজেই।

যুক্তরাজ্য সরকারের নতুন ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান এবং তাঁদের প্রতিনিধিরা। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জোট ইউনিভার্সিটি ইউকের প্রধান নির্বাহী অ্যালিস্টেয়ার জার্ভিস বলেন, ‘নতুন নিয়মের ফলে যুক্তরাজ্য আবারও বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে প্রথম পছন্দের গন্তব্যে পরিণত হতে সক্ষম হবে।’

Scroll to Top