টিউশনির সম্মানী পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় হাজারো শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির জন্য পড়াশুনা করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘ফ’ অদ্যাক্ষরের এক ছাত্র। পরিবারের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় প্রথমবর্ষ থেকিই টিউশনি করে খরচ চলে তার। তবে এবার ঈদের আগে টিউশনির টাকা পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানেন না তিনি।

আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি একটি টিউশনি করিয়ে পাঁচ হাজার টাকা পাই। তবে এবার টিউশনের বাসা থেকে এখনো কোনো কিছু বলা হয়নি। আর আমি কখনো টিউশনির টাকা চেয়েও নেইনি। ঈদের আগের যদি তারা টাকা নাও দেয়, তারপরও চেতে পারবো না। তবে টাকাটা পেলে ঈদটা ভালোভাবে কাটাতে পারতাম।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। পড়াশুনা শেষ করে অনেকে চাকরির জন্যও পড়াশুনা করছেন। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর বড় অংশই টিউশনি কিংবা খণ্ডকালীন চাকরি করে নিজেদের খরচ চালান। মধ্যবিত্ত কিংবা দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাদেরকে বাধ্য হয়ে এ পথ বেছে নিতে হয়।

টিউশনি কিংবা খণ্ডকালীন চাকরি করে যে সামান্য টাকা পান তা দিয়ে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি বাড়িতেও পাঠানোর চেষ্টা করেন। এছাড়া ঈদেও বিশেষ কিছু কেনা বা পরিবারের সদস্যদের নতুন পোশাক দেওয়ারও পরিকল্পনা থাকে। তবে এবার ঈদুল ফিতর মাসের শুরুতে পড়ায় এ টাকা পাবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিতায় আছেন অনেকে।

কয়েকজন শিক্ষার্থীরা সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার মাসের শুরুতেই ৫ অথবা ৬ জুন ঈদুল ফিতর হওয়ায় এর তিন-চার দিন আগেই তারা বাড়ি যাবেন। কিন্তু টিউশনি কিংবা খণ্ডকালীন চাকরির টাকা পাবেন কিনা সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নন। এছাড়া এ টাকা তাদের প্রাপ্য হলেও চেয়ে নেওয়াটা বিব্রতকর। এজন্য টাকা না পেলেও তাদের আসলে তেমন কিছু করার নেই বলে শিক্ষার্থীরা জানান। বিষয়টি নিয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে অনেকের কথা হলেও নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে তারা রাজি হননি।

রাজধানীর একটি কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করেন ‘আ’ অদ্যাক্ষরের সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করা একজন ছাত্র। তিনি জানান, ‘ক্লাস অনুযায়ী টাকা দেয় কলেজ। মাস শেষে বিভাগ থেকে ক্লাসের হিসেব কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তারা পরবর্তীতে সে অনুযায়ী টাকা দেয়। তবে এবার ঈদের আগে টাকা না পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত। কারণ মাসের শুরুতেই ঈদ হওয়ায় বিভাগ থেকে হিসেব যাবে না। সে কারণে ঈদের আগে টাকাটাও পাওয়া হচ্ছে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু টিউশনি কিংবা খণ্ডকালীন চাকরিই নয়, অনেকে পড়াশুনার পাশাপাশি পূর্ণকালীন চাকরিও করেন। কিন্তু এ ধরণের অনেক প্রতিষ্ঠানও ঈদের আগে তাদের বেতন দিচ্ছে না। ফলে গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনের জন্য কিছু কেনার আশা থাকলেও তা পূরণ না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রীক গ্রুপেও এ নিয়ে হতাশাজনক পোস্ট দিচ্ছেন অনেকে।

কাওরান বাজার এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক এক ছাত্র জানান, এবার আগেভাগেই তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বেতন নয় শুধু বোনাস দেওয়া হবে। এই সামান্য টাকা দিয়ে যাওয়া-আসা বাদ দিলে সামান্য কিছু অবশিষ্ট থাকবে। এটি দিয়ে আসলে কারোর জন্যই কিছু কেনা সম্ভব হবে না। এ নিয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

তবে টিউশনি, খণ্ডকালীন চাকরি কিংবা স্বল্প বেতনে যারা পূর্ণকালীন চাকরি করেন ঈদের মতো উৎসবের সময়গুলোর আগে তা পরিশোধ করে দেওয়া মালিকপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব বলে অনেকে মনে করেন।

এ ব্যাপারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘টিউশনি কিংবা খণ্ডকালীন চাকরি যারা করেন তারাই আসলে এর কষ্টটা বুঝবেন। কোনো মাসে এ টাকা পেতে সামান্য দেরি হলেই তাদের কষ্টটা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অনেকে টাকার অভাবে ঈদে বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারেন না। এজন্য মালিকপক্ষের উচিৎ এ টাকা সময়মতো পরিশোধ করা। এতে অন্তত ওই ছাত্রগুলো কষ্ট পাবেন না।’ সূত্র-দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস।

Scroll to Top