রাজধানীর বাজারগুলোতে মাছ, মাংস ও তেলের দাম বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের এ উর্ধমুখী বেকায়দায় ফেলেছে সীমিত আয়ের নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। এতে জীবন-যাপনের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারগুলো।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি মাছের দাম ৩০-৫০ টাকা, মাংসের দাম ২০-৩০ টাকা ও তেলের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে সবধরনের সবজি ও মুদি পণ্যের দাম।
ক্রেতাদের অভিযোগ যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অজুহাত সরবরাহ কমায় মোকামে দাম বেড়েছে। ফলে আমাদেরও বেশি দাম দিয়ে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
শুক্রবার (৮ মার্চ) রাজধানীর মিরপুর ১ নাম্বার বাজার, দয়াগঞ্জ, নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, সেগুণবাগিচা বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি এককেজি ওজনের ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১০০০ টাকা, ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ টাকা, এককেজি ওজনের ইলিশ ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এ বিষয়ে মিরপুর ১ নাম্বার কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা সোহেল বলেন, জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ শুরু হবে তাই বাজারগুলোতে এখন থেকেই প্রচার শুরু করেছে সরকার। একইসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে অভিযানও পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এজন্য বাজারগুলোতে সবধরনের মাছের সরবরাহ কমে গেছে। কিন্তু চাহিদা আগের মতো থাকায় দাম বেড়েছে। বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা বেড়েছে ইলিশের তাই এর দামও অন্যান্য মাছের তুলনায় বেশি।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৬ থেকে ২২ মার্চ পালন করা হবে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০১৯। এলক্ষ্যে এখন থেকেই বিভিন্ন বাজারে অভিযান ও প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এদিকে বাজারে সবধরনের মাছের দাম কেজিতে ৩০-৫০ টাকা বেড়েছে। প্রতিকেজি রুই ২৮০ থেকে ৪২০ টাকা, পাবদা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, শিং ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকা, চিতল ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা, আইড় ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, বাইলা ৮০০টাকা, বাইম ৬০০ টাকা, পোয়া ৬০০ টাকা, মলা ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে সবধরনের মাংসের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪৮০ টাকায়। খাসির মাংস ৮৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২১০ টাকা, কক মুরগি ১৮০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাংস বিক্রেতা মামুন জানান, প্রতিবছর এ সময় মাংসের দাম বেশি থাকে। কারণ ফাল্গুন মাসে সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি হয়। ফলে অন্য সময়ের থেকে চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে।
খোলা সোয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিলো ৮৫ টাকা। আর ৫ লিটারের প্রতি গ্যালন রূপচাঁদা তেলে ২০ টাকা বেড়ে ৫০০ থেকে ৫১০ টাকা হয়েছে, যা গত সপ্তাহে ছিলো ৪৮০ টাকা। পুষ্টি বিক্রি হচ্ছে ৪৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিলো ৪৫০ টাকা। তীর ৪৯০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিলো ৪৭০ টাকা। ফ্রেস ৪৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিলো ৪৫০ টাকা। এছাড়া খোলা সরিষার তেল প্রতিকেজি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্চে। গত সপ্তাহে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এবিষয় বাদল স্টোরের বাদল হোসেন জানান, গত সপ্তাহের শেষের দিকে হঠাৎ ভোজ্যতেলের দাম পাইকারি বাজারে ২০ টাকা বেড়েছে। ফলে আমরাও ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছি। তবে, যাদের আগে স্টকে ছিল তারা একটু কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে পারেনি তিনি।
কাঁচাবাজারগুলো দেখা গেছে, পণ্যের মান ভেদে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, শিম ৩০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিকেজি করলা ৮০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, লাউ ৫০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা কেজি এবং মুলা ২৫ টাকা, নতুন আলু ১৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবধরনের শাক বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা আঁটি।
অপরিবর্তিত রয়েছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা আটা ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, আমদানি করা চিনি ৫০, ডাল ৪০ থেকে ৯০, লবন ৩০ থেকে ৩৫, পোলাওর চাল ৯০ থেকে ৯৫ বিক্রি হচ্ছে। তবে বেড়েছে সবধরনের ডিমের দাম। মুরগির ডিম প্রতি ডজনে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিলো ১০০ টাকা। হাঁসের ডিম ১৫৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ১৭০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।