গত দুই সপ্তাহে রকম ভেদে ধানের দাম কমেছে মণপ্রতি ৫০-১০০ টাকা। রকম ভেদে বস্ত্মা প্রতি চালের (সাড়ে ৯৩ কেজি) দাম কমেছে ২০০-৩০০ টাকা। বর্তমানে পাইকারি বাজার দর অনুযায়ী প্রতি মণ ধানের বিপরীতে চালে ১০০-১৫০ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
এরপরও চাহিদামতো ক্রেতা মিলছে না চালের। ফলে উৎপাদনকৃত চাল মিল বা গুদামে ভরে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ধানের চিত্রটাও একই রকম। সেদ্ধ-শুকানো শেষে তা ভাঙানোর জন্য মিল বা গুদামে উঠানো হচ্ছে। এটা অবশ্য হাস্কিং মিলারদের অবস্থা।
অটোমেটিক মিলারদের চিত্রটা ভিন্ন রকম। তাদের ধান সেদ্ধ-শুকানোর প্রয়োজন হয় না। মিলের ভেতর ধান দিলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেরিয়ে আসে চাল। ব্যাপারী বা মহাজনদের চাহিদা না থাকায় এসব মিলারদের ঘরেও পড়ে রয়েছে ধান-চালের প্রচুর মজুদ।
বর্তমানে লোকসান দিয়েও চাল বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সবমিলে সময়ের ব্যবধানে চালের লাভের গুঁড় চলে যাচ্ছে পিঁপড়ার পেটে। বর্তমানে নিজের ফাঁদে ধরা চাল ব্যবসায়ীরা- মন্ত্মব্য একাধিক ব্যবসায়ীর। বাড়তি লাভের আশা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। বড় ও মাঝারি শ্রেণির ব্যবসায়ীরা এ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। এর মাঝখানে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী মোটা অঙ্কের মুনাফা লুটে হাত-পা গুটিয়ে বর্তমানে চুপচাপ রয়েছেন।
বুধবার শস্যভা-ারখ্যাত উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ চালের মোকাম বগুড়া জেলায় ধান-চাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংশিস্নষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথায় এমন তথ্য ওঠে আসে। একটি সেমি অটোরাইস মিলের শেয়ারের মালিক জাহাঙ্গীর আলম। প্রায় দেড়শ\’ মণ ধান ধরে সে রকম দুটি চাতালে চলে তার ব্যবসায়িক কারবার। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে তিনি সব ধান চাল বানিয়ে বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। এতে যে লাভ হয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট এই ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, বর্তমানে বিআর-২৯ জাতের একমণ ধানের দাম ১১৫০-১২০০ টাকা। সঙ্গে খরচ সেদ্ধ-শুকানো বাবদ ৩০ টাকা, ভাঙানো ১০ টাকা, লোড-আনলোড ১০ টাকা ও পরিবহন ব্যয় ২০ টাকা মিলে সর্বমোট ৭০ টাকা। সেই ধান থেকে চাল পাওয়া যায় বড়জোর ২৬ সের।
এ হিসেবে চালের বস্ত্মা প্রতি (সাড়ে ৯৩ কেজি) পড়ে ৪৫০০-৪৭০০ টাকা। অথচ সেই চাল বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ৪৩০০-৪৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ বস্ত্মাপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা বর্তমানে লোকসান গুণতে হচ্ছে দাবি এই ব্যবসায়ীর। দুই সপ্তাহ আগেও একই পরিমাণ চাল রকমভেদে ৩০০-৪০০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে।
আব্দুল হামিদ, জহুরম্নল ইসলাম, আব্দুল আলিম, আইয়ুব আলীসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, পাইকারি বাজারে চালের দাম কমা অব্যাহত রয়েছে। তবে সে অনুপাতে ধানের দাম কমছে না।
তারা আরও জানান, বাড়তি বাজারে বেশি লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা সীমিত করে চাল বিক্রি করছিলেন। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন প্রান্ত্মের বড় বড় আড়তদার ও ব্যাপারীরা বেশি লাভের আশায় একই কাজ করছিলেন।
কিন্তু সরকারের সংশিস্নষ্টদের সঙ্গে সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের বৈঠকের পর পুরো হিসেবটা যেন পাল্টে গেছে। বাইরে থেকে চাল আসা শুরম্ন হয়েছে। মজুদদাররা ভয়ে আছেন। ফলে চাল কিনতে মোকামে আসছেন না। এতে বগুড়ার বড়-মাঝারি ব্যবসায়ীদের মিল বা গুদামে চালের পাহাড় পড়ে আছে।
সবমিলে অনেকটা পাইকারি ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে বৃহৎ এ চালের মোকাম। আর তাতে বাড়তি লাভের আশায় নিজেদের পাতা ফাঁদে পড়েছেন একটা বড় অংশের চাল ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি হিসেবে প্রতিবস্ত্মা (সাড়ে ৯৩ কেজি) বিআর -২৯ ৪৩০০-৪৪০০ টাকা, বিআর -২৮ ৪৫০০-৪৬০০ টাকা, মিনিকেট ৫৪০০-৫৫০০ টাকা, কাটারিভোগ ৫৯০০-৬০০০ টাকা, জিরাশাইল ৪৬০০-৪৮০০ টাকা, হিরা (মোটা) ৩৬০০-৩৭০০ টাকা, পারিজাত ৪০০০-৪১০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
অপরদিকে প্রতিমণ ধান বিআর -২৯ ১১৫০-১২০০ টাকা, বিআর -২৮ ১২০০-১২৫০ টাকা, মিনিকেট ১৩৫০-১৪০০ টাকা, জিরাশাইল ১৩৫০-১৪০০ টাকা, হিরা (মোটা) ৯৫০-১০০০ টাকা, পারিজাত ১০৫০-১১০০ টাকায় জেলার বিভিন্ন হাটে বেচাবিক্রি হচ্ছে বলে এসব ব্যবসায়ীরা জানান।