প্রতি বছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয় নতুন বছরের প্রথম দিনে। এবার জাতীয় নির্বাচনের কারণে মেলা শুরু হয় ৯ জানুয়ারি। প্রতি বছরের মতো মাসব্যাপী এ মেলা নগরবাসীর জীবনে নিয়ে এসেছে ভিন্ন মাত্রা। বিনোদনের পাশাপাশি নানা পণ্যের পরিচিতি ও কেনাকাটার সুযোগ পাচ্ছেন ক্রেতা দর্শনার্থীরা। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেলায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভীড় দেখা যায়।
সকাল থেকেই মেলায় আসতে শুরু করেন দর্শনার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। বিকেল থেকেই মেলার মাঠে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের অনেকেই জানান, মেলার শেষ দিকের ভিড় এড়াতে শুরুতেই এসেছেন। আবার অনেকে কয়েকবার আসার পরিকল্পনা করেছেন।
মিরপুর ১২ নম্বরের বাসিন্দা বেসরকারি কর্মকর্তা নাজমা আক্তার বলেন, ঢাকায় বেড়ানোর জায়গা খুবই কম। এ কারণে মেলায় একটু ঘুরে দেখতে এসেছেন। অবশ্য কিছু কেনাকাটা করবেন তিনি, তবে মেলার শেষ দিকে। মেলার মধ্যে শিশুপার্কগুলোতে বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছে ছেলে-মেয়েরা। সেখানে বেশ ভিড় দেখা গেল। বিভিন্ন প্যাভিলিয়নেও নানা বিনোদনের আয়োজন রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এক স্থানে নানা পণ্য যাচাই করে কেনার সুযোগ থাকে। এছাড়া মেলায় বিভিন্ন পণ্যে ব্যাপক পরিমাণ ছাড় থেকে। ফলে ক্রেতাদের অনেকেই এই মেলা থেকেই কেনাকাটা করার পরিকল্পনা করে থাকেন।
মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, স্টল ও প্যাভিলিয়নে ছুটছেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। নিজেদের পছন্দের পণ্য কিনছেন নানা বয়সী মানুষ। দেশ-বিদেশের নানা পণ্যের সমাহার আর \’অফারে\’র মধ্য থেকে নিজেদের পছন্দের পণ্যটি কিনতে ব্যস্ত ছিলেন তারা। দেশি কোম্পানির বেশিরভাগ ব্র্যান্ডের পণ্যের স্টল ও প্যাভিলিয়ন থাকায় বেশ যাচাই বাছাই করে খোলা পরিবেশে পণ্য কিনেছেন। ছুটির দিন হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষকেই মেলায় আসতে দেখা গেছে পরিবার-পরিজন নিয়ে। মাসব্যাপী এই মেলার শুরুতেই ক্রেতা দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো।
এবার মেলার শুরুতেই কেনাকাটা বেশ জমে উঠেছে। মেলার গেটে কিছু সময় লক্ষ্য করলে এর বাস্তব চিত্র দেখা যায়। মেলার গেট দিয়ে বের হওয়া বেশিরভাগ মানুষ পণ্য কিনে ব্যাগ ভর্তি করে ফিরছেন। আগে ভাগে পছন্দের পণ্য কিনে নিচ্ছেন তারা। তাছাড়া রাজধানীর বেশিরভাগ কর্মজীবী মানুষ ব্যস্ততার কারণে সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে মেলায় যেতে পারেন না। মেলা শুরু হওয়ার পর পরই ছুটির দিনে হাজির হয়েছেন হাজার হাজার ক্রেতা ও দর্শনার্থী।
মেলার মাঠে নতুন নতুন পণ্যের পসরা সাঁজিয়েছে দেশ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। নানা কারুকাজে সাঁজানো হয়েছে স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো। সুন্দর ছিমছাম পরিবেশ উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা। মেলায় পণ্যের মূল্য কথা হলো মিরপুর থেকে আসা এক গৃহিনীর সঙ্গে। তার মতে, ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই আছে পণ্যের দাম।
শুক্রবার ছিল মেলার তৃতীয় দিন। এদিনও কিছু স্টল ও প্যাভিলিয়নে পণ্যের পসরা সাজাতে দেখা যায়। আবার সাজানো স্টলগুলোতে পণ্য বিক্রি করতে ব্যস্ত ছিলেন বিক্রয় কর্মীরা। মেলায় অংশ নেওয়া জেডিপিসির স্টলে কেটুকে ওয়্যার্সের নারী উদ্যোক্তা ইশরাত জাহান বলেন, পাটের নানা পণ্য তৈরি হয় তার কারখানায়। এসব পণ্যের বেশিরভাগই রফতানি করেন। এসব পণ্য বিক্রির জন্য ক্রেতার খোঁজে মেলায় এসেছেন। তিনি আশা করেন, মেলায় এবার বেশ কেনাবেচা হবে। একই সঙ্গে দেশি পাইকারী ক্রেতাও পাবেন, পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পারবেন।
অন্য বছরের চেয়ে এবার মেলা আরো বেশি জমবে বলে মনে করছেন স্টল ও প্যাভিলিয়ন মালিকরা। শীতের তীব্রতা নেই। মেলায় ঘুরে বেড়ানোর মতো উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। শুরুতেই ভিড় হচ্ছে ক্রেতাদের। দিন যত গড়াবে বাণিজ্য মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীর সমাগম তত বাড়বে বলে আশা করছেন মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মকর্তারা।