বিশ্বব্যাংক এত দিন স্বল্প সুদে বাংলাদেশকে ঋণ দিলেও এবার তাদের কঠিন শর্ত ও সুদের পরিমাণ বাড়ছে। এক শতাংশেরও কম সুদের বিপরীতে বর্তমানে অনমনীয় ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক তাদের ঋণনীতি পরিবর্তন করায় এখন বাংলাদেশ আগের মতো আর সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ পাবে না; চড়া সুদের কঠিন শর্তেই ঋণ নিতে হবে।
বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের একটি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য গত বছর ২১ নভেম্বর বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) সঙ্গে একটি ঋণ চুক্তি করে সরকার। সংস্থাটির স্কেল-আপ ফ্যাসিলিটি (এসইউএফ) ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেওয়া হবে। এত দিন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আইডিএ থেকে বাংলাদেশ যে ঋণ নেয়, তার সুদের হার ছিল শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ; কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য সুদ দিতে হবে ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ হারে। ঋণ পরিশোধে সময় পাওয়া যাবে ৩০ বছর। গ্রেস পিরিয়ড থাকবে ৯ বছর। তবে এখনো নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ হওয়ায় নির্দিষ্ট বরাদ্দ অনুযায়ী স্বল্প সুদের ওই ঋণ পাবে বাংলাদেশ। বাড়তি ঋণ নিতে হলে বেশি সুদের এসইউএফের দ্বারস্থ হতে হবে বাংলাদেশকে।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফন বলেন, বাংলাদেশ যত দিন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় থাকবে, তত দিন বিশ্বব্যাংকের একটা বরাদ্দ অনুযায়ী কম সুদের ঋণ পাবে। কিন্তু বাংলাদেশের যদি এর চেয়ে বেশি ঋণের দরকার হয়, তা হলে এই নতুন তহবিল থেকে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কয়েক বছরের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশ হবে। তখন এ রকম সুদের তহবিল থেকেই ঋণ নিতে হবে। তাই এখন থেকেই কিছুটা হলেও সেই ঋণ নিয়ে অভ্যস্ত হলে সুবিধা হবে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করায় অতিরিক্ত অর্থায়নে এই বেশি সুদের ঋণ নিতে হচ্ছে। অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা যদি আরও বেশি হতো, তা হলে কোনো ধরনের বাড়তি সুদ গুনতে হতো না। তাই বিশ্বব্যাংকের আইডিএর সঙ্গে অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রায় যাতে আরও বেশি বরাদ্দ থাকে, সে জন্য চেষ্টা করার পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্বব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের স্বল্প আয়ের ঋণগুলো আর পাচ্ছে না। এখন ধীরে ধীরে মধ্যম আয়ের ঋণের কোটায় ঢুকে যাবে।
বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ), ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), মাল্টিলেটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি ঋণ বিতরণ করে। আগে বাংলাদেশ আইডিএ থেকেই বেশি ঋণ পেত, এখন কম পাবে। আইএফসি থেকেও কঠিন শর্তের ঋণ নিতে হবে। আইএফসি প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক বেসরকারি খাতের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয়। এ ঋণের সুদের হার একটু বেশি। একই সঙ্গে গ্রেস পিরিয়ড কম এবং কম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। সে কারণে এ ধরনের ঋণকে কঠিন শর্তের ঋণ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
আইএফসি থেকে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সরকারও চাচ্ছে এই প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্যিক ঋণ নিতে। স্থানীয় অর্থনীতিবান্ধব, পরিবেশবান্ধব ও সামাজিক উন্নয়নে এই প্রকল্প থেকে ঋণ দেওয়া হয়। বিভিন্ন ঝুঁকি বিবেচনায় বিশ্বব্যাংক মাল্টিলেটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সির আওতায়ও ঋণ দিয়ে থাকে। এতে ঝুঁঁকির মাত্রার বিপরীতে প্রিমিয়াম আরোপ করা হয়। ফলে এই ঋণ অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ।
আইডিএর ঋণগুলো হচ্ছে কম সুদের এবং দীর্ঘমেয়াদি। এসব ঋণের সুদের হার থাকে দশমিক ৩০ থেকে সোয়া ১ শতাংশ। গ্রেস পিরিয়ড ১০ থেকে ১৫ বছর। পরিশোধের সময় থাকে ৩০ থেকে ৪০ বছর। এর আওতায় বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ, লিঙ্গ সমতা, দারিদ্র্যবিমোচন, নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতে ঋণ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময় : ১২০৮ ঘণ্টা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ