বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট কেনায় স্বল্প সুদে ঋণ পাবেন সরকারি চাকুরেরা!

বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনায় সরকারি চাকরিজীবীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকার অবশ্য এ জন্য আলাদা কোনো তহবিল গঠনের চিন্তা করছে না। অর্থাৎ ঋণ নিতে হবে ব্যাংকব্যবস্থা থেকেই। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহনির্মাণ ঋণ বর্তমানে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, যে নিয়মটি ১৯৮২ সাল থেকে চালু। এ নিয়মের পরিবর্তে নতুন নীতিমালা করতে এ বছরের শুরুতে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ আর এম নজমুস ছাকিবের নেতৃত্বাধীন যে কমিটি করা হয়, সে কমিটিরই প্রতিবেদন এটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার ঋণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক সুদ হারকে বিবেচনায় নিতে হবে। সবার জন্যই বর্তমানে গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার ঋণের সুদ সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে সুদ নেওয়া হবে ৫ শতাংশ। বাকি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ সুদের টাকা তাঁদের জন্য ভর্তুকি দেবে সরকার। বছরে ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার আবেদনকারীর ঋণ অনুমোদন করা হলে তাতে সুদ বাবদ সরকারের দেওয়া ভর্তুকির জন্য ৭০০ থেকে ৯৮০ কোটি টাকা দরকার পড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ঋণের জন্য চাকরিজীবীদের বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে ৫টি গ্রুপে ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রথম গ্রুপে থাকবেন পঞ্চম ও তার ওপরের গ্রেডে বেতন পাওয়া চাকরিজীবীরা। তাঁরা ঢাকা মহানগরী, সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে বাড়ি নির্মাণ করতে বা ফ্ল্যাট কিনতে ঋণ পেতে পারেন সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া এই গ্রুপের চাকরিজীবীরা জেলা সদরের জন্য ৬০ লাখ এবং জেলা সদরের বাইরের জন্য ৫০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পঞ্চম গ্রুপে ২০তম থেকে ১৮তম গ্রেডে বেতন পাওয়া চাকরিজীবীদের জন্য ঋণের পরিমাণের প্রস্তাব করা হয়েছে ঢাকা মহানগরীর জন্য ৩০ লাখ, জেলা শহরের জন্য ২৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২০ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ বছর চাকরি আছে, এমন সরকারি চাকরিজীবী বর্তমানে ৭ লাখ। তাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশকে ঋণ দেওয়া হলেও বছরে আবেদনকারী দাঁড়াবে ৭০ হাজার। বিভিন্ন ভৌগোলিক এলাকায় বসবাস করায় গড়ে প্রতিজনের ঋণের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা করে হিসাব করলেও বছরে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮ হাজার কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ২৮ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক সুদ হবে ২ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ শতাংশ সুদে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণগ্রহীতারাই দেবেন। ৩ দশমিক ৫ শতাংশ সুদের জন্য বাকি ৯৮০ কোটি টাকা সরকারের বাজেট বরাদ্দ হতে সুদ ভর্তুকি বাবদ পরিশোধ করা যেতে পারে।

পঞ্চম গ্রুপের ঋণের পরিমাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, ২০তম গ্রেডে বর্তমানে যে চাকরিজীবী যোগ দিয়েছেন, অবসরে যাওয়ার সময় তাঁর মূল বেতন দাঁড়াবে ২১ হাজার ৩১০ এবং গ্র্যাচুইটি হবে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর ৭০ শতাংশ ঋণ পরিশোধ ধরা হলে পরিমাণ হয় ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হলে ব্যাংক ও ডেভেলপারের সঙ্গে সম্পর্কের ধরনও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়, ঋণ দেওয়ার আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের একটি চুক্তি করতে হবে। এরপর হবে ঋণ আবেদনকারীর সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি।
ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে শর্ত থাকবে এ রকম—সরকারের নিয়মকানুন মেনে ভবন তৈরি করতে হবে এবং ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে আবাসন খাতের সমিতির (রিহ্যাব) সদস্য হতে হবে। ডেভেলপারের দেওয়া দলিল ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখতে হবে।

এ ছাড়া ঋণ মঞ্জুর ও ডেভেলপার বরাবর মূল্য পরিশোধের ছয় মাসের মধ্যে ফ্ল্যাটের দখল হস্তান্তর করতে হবে, আর মাসিক কিস্তি শুরু হবে ঋণ মঞ্জুরের ছয় মাস পর থেকে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টিতে সরকারের খুব বেশি আর্থিক সংশ্লেষ থাকবে না, বরং পরোক্ষভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধের উপায় হতে পারে। কারণ, সব সরকারি চাকরিজীবীরই অন্তত একটি ফ্ল্যাটের মালিক হওয়ার স্বপ্ন থাকে। আর এ জন্য এক শ্রেণির সরকারি চাকরিজীবী যেকোনো মূল্যে ওই স্বপ্ন পূরণ করতে চান।

অর্থসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি।’ সূত্র – প্রথম আলো

বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম

Scroll to Top