পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে পুরো দমে। সেই সঙ্গে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে এর ব্যয়। তৃতীয় দফায় আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে স্বপ্নের এ সেতুর নির্মাণ ব্যয়। এ দফায় ব্যয় বাড়ার ফলে পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়াবে সব মিলিয়ে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সর্বশেষ পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মূল ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার) থেকে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ অতিরিক্ত এ ব্যয় বাড়ছে। মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০০৭ সালে একনেক ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিল। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে যায়। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিক প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারও ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সবশেষ আরও ১৪০০ কোটি টাকা বাড়ছে।
সেতু বিভাগ আরও জানায়, মূল ডিপিপিতে ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় প্রাক্কলিত ছিল ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। কিন্তু এখন মোট ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে ২ হাজার ৬৯৮ হেক্টর। অতিরিক্ত জমি বাবদ মোট ব্যয় প্রয়োজন ২ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ভূমিসহ অধিগ্রহণ বাবদ আরও এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
ভূমি অধিগ্রহণের প্রভাবে নতুনভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয় বাড়ছে বলে জানায় সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, ভূমি অধিগ্রহণ খাতের জমির পরিমাণ ও ব্যয় পরিবর্তনের কারণে অনুমোদিত ডিপিপি থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ বাড়ছে।
নতুন করে ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, \’মূল ডিপিপির তুলনায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে আমাদের আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। ফলে পদ্মা সেতুর যে মোট ব্যয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল এটা আর থাকছে না। মোট ব্যয়ের ক্ষেত্রে আবারও পরিবর্তন করতে হবে। কারণ নতুন করে ভূমি আমাদের লাগবে, এটা ছাড়া প্রয়োজনীয় কাজ হবে না। এই প্রস্তাবনা তারা পরিকল্পনা কমিশনেও পাঠিয়েছেন।\’
সূত্র আরও জানায়, দ্বিতীয় সংশোধিত ব্যয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ডিসেম্বর ২০১৮। ফলে প্রকল্পের ব্যয়ের সঙ্গে সময় বৃদ্ধি সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পটি পাঁচটি কম্পোনেন্টে বাস্তবায়িত হচ্ছে যার অন্যতম নদীশাসন। নদীশাসনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড।
মূল নকশায় প্রকল্প এলাকায় কিছু নিচু জমি চিহ্নিত করা হয়। তবে বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় নিচু জমিতে পলি জমে উঁচু জমিতে রূপ নেয়। এর পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এলাকায় জমির মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। পলি জমি চাষাবাদে উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা এসব জমি ছাড়তে চাচ্ছে না। এমনকি সাময়িকভাবে জমি ভাড়াও দিতে চাচ্ছে না কৃষকরা।
কারণ নদীশাসনের জন্য এসব জমিতে কংক্রিটের বিশাল বিশাল বস্নকসহ প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী রাখা হবে। সে জন্য জমি হুকুমদখলের প্রস্তাব করা হলেও জমির মালিকরা রাজি হচ্ছে না। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ভূমি হুকুমদখলে জনগণকে রাজি করানো যায়নি বলে জানায় সেতু বিভাগ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায় অতিরিক্ত ১ হাজার ১৬৭ হেক্টর জমি প্রয়োজন। জমি, স্থাপনা, গাছপালার ক্ষতি বাবদ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রত্যাশিত অর্থ স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের হস্তান্তর করা হবে।
নতুন করে ব্যয় বৃদ্ধির ফলে তৃতীয়বারের মধ্যে সংশোধন করা হবে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের কার্যক্রম।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি