চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। একইসঙ্গে এ সময়ে রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তাও ছাড়িয়েছে। গত দুই মাসে মোট ৬৬২ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানির হয়েছিল ৫৮২ কোটি ২৯ লাখ ডলার। সে হিসাবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গত জুলাই ও আগস্ট মাসের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাত দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে।
গত দেড় দশকের মধ্যে গেল অর্থবছরে (২০১৬-১৭) সবচেয়ে কম রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র এক দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত দেড় দশকে এত কম প্রবৃদ্ধি হয়নি। অন্য দিকে, অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২ বিলিয়ন ডলার কম রপ্তানি হয়েছে। এসব বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বেশ ভালো রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, আবারো গতি ফিরছে রপ্তানি বাণিজ্যে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, একক মাস হিসাবে গত আগস্ট মাসের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯০ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৩৬৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। অন্য দিকে, গত অর্থবছরের আগস্ট মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩২৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। অর্থাত্ আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রপ্তানি আয়ের প্রধান হাতিয়ার তৈরি পোশাকের মধ্যে নিটওয়্যার ও ওভেন পোশাক খাতের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেই রপ্তানির সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আর সেটা হলেই প্রবৃদ্ধিও স্বাভাবিকভাবে বাড়ে। ইপিবির তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ওভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২৬৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সাত দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি।
এছাড়া গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। আর গত দুই মাসে নিট পোশাক রপ্তানি করে ২৮৬ কোটি ৮৮ লাখ ডলার আয় হয়েছে। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৬ দশমিক ০৪ শতাংশ বেশি। একইসঙ্গে এ আয় আগের অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ০২ শতাংশ বেশি। তবে হোম টেক্সটাইল ও স্পেশালাইজড টেক্সটাইল খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। হোম টেক্সটাইল খাতে এ দুই মাসে আয় হয়েছে ১৪ কোটি সাত লাখ ডলার। আর স্পেশালাইজড টেক্সটাইল খাতে আয় হয়েছে এক কোটি ৫৮ লাখ ডলার। হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং স্পেশালাইজড টেক্সটাইল খাতে চার দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ম্যানুফেকচারার্স পণ্যসহ রপ্তানি তালিকার বিভিন্ন পণ্যেই রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়েছে। তবে জুলাই ও আগস্ট মাসে রপ্তানির ভালো অবস্থার মধ্যেও কেমিক্যাল প্রোডাক্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্ট, কার্পেট, গ্লাস ও গ্লাসওয়্যার, বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস প্রভৃতি পণ্যে লক্ষ্যমাত্রা বা প্রবৃদ্ধি কোনোটাই অর্জিত হয়নি। আর পাট ও পাটজাত পণ্য, রাবার, প্লাস্টিক পণ্য, অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং প্রোডাক্ট প্রভৃতিতে প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি খাত মূলত পোশাকনির্ভর। রপ্তানিতে পোশাক খাত ভালো করলে তার ইতিবাচক প্রভাব পুরো রপ্তানির ওপর পড়ে। অন্য দিকে, পোশাক খাতে রপ্তানি খারাপ হলে তার নেতিবাচক প্রভাবও একইভাবে পড়ে। তিনি বলেন, রপ্তানি আয় আরো বাড়াতে প্রচলিত বাজার ছাড়াও অনেক নতুন বাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। পোশাকের পাশাপাশি অন্য পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর প্রতিও মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পোশাক খাতের জন্য ইতিবাচক হয়েছে। তবে পোশাক ছাড়া অন্যান্য খাতের রপ্তানি আয় নেতিবাচক। এজন্য তিনি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তাসহ প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেন।
বাংলাদেশ সময় : ১১৫৮ ঘণ্টা, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ