ব্যাংকের লাখ লাখ কোটি টাকা লোপাট, কঠিন সিদ্ধান্তের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের

ব্যাংক খাত থেকে গত কয়েক বছরে ব্যবসায়ী-ব্যাংকারদের যোগসাজশেই লাখ লাখ কোটি টাকা লোপাট হওয়ার হদিস পাওয়া গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না অনিয়মনকারীদের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে টেকসই অর্থ ব্যবস্থার স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরাও।

দেশের অর্থ পাচারকারীদের ধরার দায়িত্ব পেয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক মহাপরিচালক মাসুদ বিশ্বাস নিজেই নিয়েছেন সেই সুযোগ- এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পদত্যাগও করেন তিনি।

পটপরবির্তনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের পালিয়ে থেকে পদত্যাগের ঘটনাও নজিরবিহীন। গত ১৬ বছরে লাখো মানুষের জমানো অর্থ ব্যাংক থেকে নানা কৌশলে আত্মসাতের মহোৎসবের সুযোগ দেয়ার কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা হয়েছে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই।

এমন বিশ্বাস হারা লোকের ভারেই সংকটে দেশের ব্যাংক খাত। খেলাপির খাতায় যোগ হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। সরকার পতনের পর অনিয়মের নানা চিত্র গণমাধ্যমের পাতায় চিত্রায়িত হলেও সংস্কারের খাতায় কতটুকু লিপিবদ্ধ হচ্ছে এসব খতিয়ান?

অর্থনীতি নিয়ে যারা প্রতিনিয়ত থাকেন নানা পর্যালোচনায়, তাদের মুক্ত বাক্যেই উঠে আসছে নতজানু পদক্ষেপের কথা।

অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির গণমাধ্যমকে বলেন, নামে-বেনামে টাকা চলে গেছে। এর সঙ্গে তো ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত আছেন। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে কড়া বার্তা দেয়া উচিত। যেসব ব্যাংকে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, সেগুলোকে প্রয়োজনে জনসমুক্ষে নিয়ে আসা দরকার। কিন্তু সেই ব্যাপারে কোনো ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই।

আর্থিক খাতে কতটা অনিয়মে জড়িত ব্যাংকাররা, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বক্তব্যেও উঠে এসেছে ভয়াবহ চিত্র। বলেন, লোম বাছতে উধাও হতে পারে কম্বল। ভালো হওয়ার সুযোগ দিতে চান তিনি।

গভর্নর বলেন, মানুষকে ভালো হতে দেন! ভুল করে থাকলেও কেউ শুদ্ধ হতে চাইলে, আমি সেটাই চাই। কিন্তু তারপরেও সে খারাপ কাজ করলে তাকে শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে।

ঘুনে ধরা ব্যাংক খাতের সংস্কারে গভর্নরের এই বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলছেন প্রবীণ ব্যাংকাররা।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ৫৩ বছরের রেকর্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো লোককে পদত্যাগ করতে দেখা যায়নি। কিন্তু এবার পদত্যাগের কারণটা কী? কারণটা অবশ্যই তদন্ত করতে হবে।

পরিচ্ছন্ন অর্থ কারবারে এখনো ব্যাংকেই নিজেদের আস্থায় রাখতে চান হাজার হাজার গ্রাহক। কিন্তু তাদের দাবি একটাই, লুটপাটকারীদের বিচার হতে হবে।

স্বৈরাচারীদের কারণে ডুবতে থাকা এই দেশটা নতুন করে রাঙাতে ’২৪-এ যারা বিলিয়ে দিলো রক্ত, তাজা প্রাণ। স্বপ্ন ছিল শহীদ ও কোটি জনতার বৈষম্য, নৈরাজ্য আর লুটতারাজ মুক্ত হবে বাংলাদেশ। বিচার হবে জুলুমের। লাল-সবুজের পতাকা উড়বে সমতাভিত্তিক কল্যাণময় এক রাষ্ট্রের আকাশে। সেই লক্ষ্যপূরণ আরও কতদূর, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ২৪ ও ২৫- এর সন্ধিক্ষণে।

Scroll to Top