রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতির মুখে পড়েছে সরকার। অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই ঘাটতির কারণে বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকের তারল্য সংকট, বাজেট বাস্তবায়নে নিম্ন গতি, রপ্তানি আয়ও নিচের দিকে। এসব সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাজেট ঘাটতি। চরমভাবে চাপের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব খাতে চাপ পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য আর্থিক খাত সচল করা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। একদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ, অন্যদিকে চলমান ডলার সংকটের কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও দুর্বল হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার পাশাপাশি এবার যোগ হয়েছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি।
এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-সেপ্টেম্বরে সার্বিকভাবে শুল্ক ও কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৩০ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। সর্বশেষ অক্টোবর ও নভেম্বরেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেনি সরকার।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। যার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২৮১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৩০ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
অক্টোবর মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৭২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ঘাটতি ৮ হাজার ৫৪১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি মাত্র দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই চার মাসে আয়কর খাতেই ঘাটতি হয়েছে ১৩ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। এই খাতে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৪৫ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
আমদানি-রপ্তানি খাতে চার মাসে ৩৯ হাজার ৬৩২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এই খাতে ঘাটতি হয়েছে ৬ হাজার ৯৬০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ০.৮৩ শতাংশ। ভ্যাট বা মূসক আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার ৫০৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা, কিন্তু আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৭২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এই খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
সরকারের অর্থবিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এডিপি বাস্তবায়ন গতি কমে গেছে। এ অবস্থায় বাজেট বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সংশোধিত বাজেট প্রণয়নে অর্থবিভাগ ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখা, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং বাজেটে বরাদ্দহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না।
অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকারি ব্যয় কোথায় করব, প্রাধিকার পরিষ্কার করতে হবে। বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ মাথায় রেখে সেখান থেকে রেহাই দেওয়ার বিষয়টি মনে রাখা উচিত। পণ্যমূল্য কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।