সম্প্রতি পেঁয়াজের বাজার বেশ অস্থিতিশীলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দুই মাস আগেও পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৫ থেকে ১৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল সেখানে হঠাৎ এই পণ্যটির দাম বেড়ে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় আবারও কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে পেঁয়াজ আমদানি আরও বাড়তে পারে। তখন আরও কমতে পারে এ পেঁয়াজের দাম।
গতকাল শনিবার দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, ভারতের নাসিক পেঁয়াজ মান ভেদে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে। যেটা গত তিন দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা দরে। অর্থাৎ গত তিন দিনের ব্যবধানে এই ভারতের নাসিক পেঁয়াজের দাম কমেছে প্রায় ১০ টাকা।
এদিকে পেঁয়াজের মতো কমছে রসুন ও আদার দামও। রসুন গত সপ্তাহে মানভেদে কেজি প্রতি ৮৫ থেকে ৮৮ টাকায় বিক্রি হলেও আজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। চায়নিজ আদা গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হলেও আজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। তবে দেশী আদা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে।
খাতুনগঞ্জের গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলয় পোদ্দার বলেন, পেঁয়াজের আমদানি হঠাৎ বেড়ে গেছে। একদিকে বাজারে ক্রেতা কম থাকা ও ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ায় আমাদের প্রতি কেজিতে ৬ থেকে ৮ টাকা লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে লোকসান দিয়েও পেঁয়াজের ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মেসার্স হক ট্রেডাসের স্বত্বাধিকারী মো. আনোয়ার পারভেজ জানান, হঠাৎ কমেছে পেঁয়াজের দাম। প্রতিদিন কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা করে পেঁয়াজের দাম কমছে। বাজারে এখন পেঁয়াজ, আদা বা রসুনের ক্রেতা কমে গেছে। আমদের কাছে বর্তমানে যে পেঁয়াজের যে মজুদ আছে সেগুলো বেশী টাকায় কেনা ছিল। ঈদের আগে আরও পেঁয়াজসহ আদা ও রসুনের আমদানি বাড়বে। তখন দাম আরও কমতে পারে।
এদিকে নগরীর নিউ মার্কেটের রিয়াজউদ্দিন ও চৌমুহনীর কর্ণফুলী বাজারে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ভারতের নাসিক পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা, আদা ( চায়না) ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, দেশি আদা ৪৫ টাকা, রসুন ( চায়না) ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কর্ণফুলী মার্কেট খুচরা ব্যবসায়ী আরিফুল মজুমদার বলেন, পাইকারি বাজারে আজ সকালে পেঁয়াজ, রসুন এবং আদার দাম কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। গতকালকেও আমি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ বিক্রি করছি ৩০ টাকা দরে। খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম আরও কমবে আর এর প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়বে।
এদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আমরা গত ১৩ই আগস্ট ক্যাবের পক্ষ থেকে ‘পেঁয়াজে নিরব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়’ নামের একটি বিবৃতি দিয়েছিলাম। তারপর অনেক ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলো। আমরা আমাদের কথা তাদের বলেছি। তবে তারা যে সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় সেটা তারা স্বীকার করতে চায় না। বাজারে পেঁয়াজসহ আদা কিংবা রসুনের দাম কমেছে সেটা সাধারণ মানুষের জন্য ভালো। আমরা চাই যেন দাম আরও কমে।
তিনি আরও জানান, শুধু ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার ফলে আমরা একপক্ষের দিকে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। ভারত ছাড়াও নেপাল, মিয়ানমার থেকে কম দামে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারে ব্যবসায়ীরা। এতে করে পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তাছাড়া দেশীয় পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও ব্যবসায়ীরা আমদানি করা পেঁয়াজ বেশী বিক্রি করতে আগ্রহী। এতে করে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও এই পেঁয়াজ তারা বিক্রি করতে চান না। এতে করে দেশীয় উৎপাদনকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
এদিকে যশোর বেনাপোলের পেঁয়াজ আমদানিকারক ফকির পাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী ওমর আলী ফকির-রহিম জানান, ভারত থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজার এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি করছেন বেশী। বেনাপোলে ২৩ থেকে দরে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে আরও দাম কমবে বলে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ২৭ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসপি