বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। এতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক আউন্স স্বর্ণের দাম ছাড়িয়েছে ২ হাজার ৭৭০ ডলার। এর প্রভাবে দেশের বাজারেও যে কোনো সময় বাড়তে পারে দাম।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) এ প্রতিবেদন লেখার সময় স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম অবস্থান করছিল ২ হাজার ৭৮১.৪৮ ডলারে। প্রতি আউন্স এর দাম একদিনে ৩৮.৬০ ডলার বা ১ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে।
মূলত মার্কিন নির্বাচন, শ্রমবাজারে অস্থিরতা, ফেডারেল রিজার্ভের সুদ হার হ্রাসের প্রবণতা ও মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা ঘিরে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণে ঝুঁকছেন। এতে বাড়ছে দাম।
এ অবস্থায় স্বর্ণকেই বিনিয়োগের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে আদর্শ হিসেবে মনে করছে বিশ্বের আর্থিক খাতের অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব আমেরিকা। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞ মাইকেল ওয়াইডমার বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণই আদর্শ। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি ও সরকারি দায় বাড়তে থাকায় বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি হ্রাস করতে স্বর্ণই এই মুহূর্তে সবচেয়ে উপযুক্ত।’
স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়ে ব্যাংক অব আমেরিকা জানিয়েছে স্বর্ণের দাম আগামী ২০২৫ সালের প্রথম ভাগের মধ্যেই প্রতি আউন্স তিন হাজার ডলারে উন্নীত হবে।
এদিকে, মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের মুদ্রার মান ধরে রাখতে স্বর্ণ কেনার দিকেই বেশি ঝুঁকছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। বর্তমানে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভের দশ শতাংশই স্বর্ণ। যা মাত্র এক দশক আগেও ছিল তাদের মোট রিজার্ভের মাত্র তিন শতাংশ।
চলতি বছরের জুন মাস থেকে স্বর্ণের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির প্রবণতা শুরু হয়। গত ৭ জুন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ২৯৩ ডলার। এরপর দফায় দফায় দাম বেড়ে গত ১৮ অক্টোবর বিশ্ববাজারে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছাড়ায় ২৭শ হাজার। এক সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে স্বর্ণের প্রতি আউন্সের দাম ছাড়াল ২ হাজার ৭৫০ ডলার।
বিশ্ববাজারে যে হারে দাম বাড়ছে, এতে যে কোনো সময় প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে দেশের বাজারেও। তাই যে কোনো সময় দেশের বাজারেও দাম সমন্বয় করা হতে পারে।
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে থাকে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সে হিসেবে সবশেষ গত ২২ অক্টোবর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। ভরিতে ১ হাজার ৮৯০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৫১ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।
এছাড়া, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫০১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৬ হাজার ১৩৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৫ হাজার ৪২৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এটি কার্যকর হয়েছে গত ২৩ অক্টোবর থেকে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৪৪ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ১৭ বার। আর ২০২৩ সালে দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ২৯ বার।