ব্যবসা-বাণিজ্যে এখনও পুরোমাত্রায় ফেরেনি স্বস্তি। গত ৩ মাস ধরে এক প্রকার স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড থমকে যাওয়ায় বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। একইসাথে ব্যাংক ঋণের সুদ হার বৃদ্ধি কঠিন করেছে শিল্প উৎপাদন। সৃষ্ট পরিস্থিতি বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, তা অর্জন করা কঠিন হবে।
এদিকে পোশাক খাতে শ্রম অসন্তোষ বিদ্যমান, কমেছে পণ্যের চাহিদাও। শ্রম অসন্তোষের পাশাপাশি আবার কোথাও ছড়াচ্ছে গুজব। গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা তো রয়েছেই। সবমিলিয়ে শিল্প খাতে তৈরি হয়েছে ভীতি আর শঙ্কা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বললেন, একদিকে আন্দোলন গেলো, কারফিউ হলো, এরপর আবার বন্যা, শ্রমিক অসন্তোষ গেলো— সবমিলিয়ে গত ৩ মাস যাবত আমাদের ভালো যায়নি। যাদের প্রয়োজন তাদের কেউ ব্যাংক থেকে টাকা পাইনি। অধিকাংশ ব্যাংক টাকা দেয়নি। শ্রমিক অসন্তোষ বা বেতন না পাওয়ার অসন্তোষটা এখনও বিরাজমান।
দেশের সামগ্রিক অবস্থায় শিল্প খাতে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি কমার আভাস দিয়েছে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। একই সঙ্গে আগের প্রক্ষেপণ থেকে সরে এসেছে বিশ্বব্যাংকও।
ঋণদাতা এই সংস্থার পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ। বলা হয়, শিল্প উৎপাদনে ‘মড়ার ওপর খারার ঘা’ হয়ে সামনে এসেছে গ্যাস ও বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততা।
অর্থনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের যে ম্যাস্টারপ্ল্যান ছিল, সেটা কার্যকর হচ্ছে না। অথবা গ্যাস-বিদ্যুৎ যারা চালাতো বা ডেলিভারি ম্যাকানিজম ছিল সেটি হচ্ছে না কিংবা এলপিজি আমদানি করার মতো ডলার নেই। অথবা নতুন গ্যাসক্ষেত্র যে আবিষ্কার হয়েছে বা আরও আবিষ্কার করে সেখান থেকে গ্যাসের ব্যবস্থা করা। ক্যাপাসিটি ঠিক মতো পূরণ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে না পারা তো হলো অদক্ষতা।
ইমেজ সংকটে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসছে না বিদেশি বিনিয়োগ। বেশ কয়েক বছর ধরে জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের হার ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ। নানামুখী উদ্যোগেও আসছে না সাফল্য। ব্যাংক ঋণের সুদহার উন্মুক্ত করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুদহার এখন ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ। শিল্প উৎপাদন ব্যহত হবার এটিও অন্যতম একটি কারণ।
অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বললেন, করপোরেট সেক্টর আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াবে। করপোরেট সেক্টর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যে বিনিয়োগ, এর জন্য অর্থনৈতিক পরিবেশটা ভালো না হলে দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগটা হবে না। বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন না।
চলতি বাজেটে জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয় ৬ শতাংশ। কিন্তু বছরের বড় সময় ধরে অস্থিরতা চলমান থাকায় থমকে গেছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়ন।
মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, কৃষিখাতে প্রথমত দৃষ্টি দিতে হবে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। আর গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে।