বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া বিশেষ সুবিধায় দুর্বল ব্যাংকগুলোতে চলমান তারল্য সংকট চলতি মাসেই অনেকটা কমে যাবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এতদিন দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে ধার দিয়ে টিকিয়ে রাখা হলেও আদতে এসব ব্যাংকের কোনো উন্নতি হয়নি। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর জানিয়েছেন, টাকা ছাপিয়ে ধার দিয়ে আর কোনো ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেয়া হবে না।
এদিকে তারল্য সহায়তা না পাওয়ায় আগস্টের মাঝামাঝি থেকেই দুর্বল ব্যাংকগুলো নগদ অর্থাভাবে ভুগতে শুরু করে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক বা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মতো দুর্বল ব্যাংকগুলোতে পাঁচ হাজার টাকার চেক ভাঙাতেও গ্রাহকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
একদিকে নিজের আমানতের টাকা তুলতে না পারায় গ্রাহকদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে তারল্য সহায়তা না পেয়ে দুর্বল এসব ব্যাংকের প্রতিদিনকার কার্যক্রমে এক রকমের ধস নেমেছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে টাকা না ছাপিয়ে সবল ব্যাংক থেকে দুর্বল ব্যাংকের অর্থ সহায়তা নেয়ার ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে একদিকে টাকা ছাপিয়ে বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ঝুঁকি যেমনি থাকবে না, অন্যদিকে বাজারে বিদ্যমান অর্থ দিয়েই তারল্য সংকট প্রশমন করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময় সংবাদকে বলেন, চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যেই দুর্বল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার চিন্তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই চুক্তির আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজে গ্রান্টার হিসেবে সবল ব্যাংক থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোর ঋণ সহায়তা ব্যবস্থা করে তারল্য কাটানোর সুযোগ করে দেবে।
এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আনুষ্ঠানিকতা যত দ্রুত শেষ করা যায় তার জন্য কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শিগগিরই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময় সংবাদকে বলেন, দুর্বল ব্যাংকে অস্থিরতা চলতে থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব সবল ব্যাংকের ওপরেও পড়বে। পুরো ব্যাংক খাতকে বাঁচাতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে সবল ব্যাংকগুলোকে দ্রুত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থেকে শরীয়াভিত্তিক এসব দুর্বল ব্যাংক কোনো আশ্বাস পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দুর্বল কিছু ব্যাংকের সঙ্গে তারল্য সহায়তা প্রশমনে চুক্তি করার কথা আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। আগে অভ্যন্তরীণ কোনো ব্যাংকের থেকে ঋণ নিতে হলে বন্ড বা বিল জামানত হিসাবে থাকতো। কিন্তু বেশির ভাগ দুর্বল ব্যাংকের জামানত রাখার মতো বন্ড বা বিলই নেই। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজে জামানত বা গ্রান্টার থেকে ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করে দেবে।
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের দশটি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। তবে যাতে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।