জুলাই ও আগস্টে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দেয়া দফায় দফায় কারফিউ ও সাধারণ ছুটিতে বন্ধ হয়ে যায় নারায়ণগঞ্জের পোশাকশিল্প কারখানা। ব্যবসায়ী সংগঠনের তথ্য মতে, এ সময়ে বন্ধ থাকায় পোশাক রফতানি খাতে ২.০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, সরকার পতনের পর ঝুট ব্যবসার দখল নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে সন্ত্রাসী বাহিনী। এ কারণে হুমকির মুখে কারখানা মালিকরা।
নিটওয়্যার খাতের ৪৭ শতাংশ তৈরি পোশাক রফতানি হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে। আর পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ জেলার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। তবে গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, কারফিউ ও টানা ছুটির কারণে বিপর্যয় নেমে আসে জেলার এ শিল্পে।
গার্মেন্টস মালিকদের দাবি, দিনের পর দিন কারখানা ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। ফলে শিপমেন্ট বাতিলসহ নতুন অর্ডার পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন তারা।
তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংক থেকে সীমিত পরিমাণ নগদ টাকা লেনদেনের বিধি আরোপ করায় নতুন করে সমস্যায় পড়েছেন গার্মেন্টস মালিকরা। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর রিব লাইন গ্রুপের পরিচালক তাপস সাহা বলেন,
কারখানা বন্ধ থাকার কারণে শিপমেন্ট ঠিকমতো করা সম্ভব হয়নি। এতে বায়ারদের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছে। অনেক টাকা কম দিতে চাচ্ছে, আবার কেউ কেউ অর্ডার বাতিল করতে চাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার নিট রেডিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আহমেদ বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অনেক কনফার্ম করা অর্ডারও বাতিল হয়েছে। অনেক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা চায় নিট শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। তাহলে আবারও পোশাক রফতানি খাতে বিশ্বের শীর্ষ স্থান দখল করা সম্ভব বলে মনে করেন সংগঠনটির সভাপতি।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত এক থেকে দেড় মাসে রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২.০ বিলিয়ন ডলারের মতো। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এদিকে, সরকার পরিবর্তনের পর ঝুট ও ওয়েস্টেজ ব্যবসা দখলে নিতে একটি সন্ত্রাসী চক্র মরিয়া হয়ে ওঠেছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের ফকির ফ্যাশন লিমিটেডের পরিচালক সুলতান মাহবুবুল হক বলেন,
গত ৫ আগস্টের পর থেকে ঝুট ও ওয়েস্টেজ ব্যবসা দখলে নিতে সন্ত্রাসী চক্র তৎপর হয়েছে। বেড়েছে চাঁদাবাজি, চলছে গোডাউন দখলের পাঁয়তারা।
আর নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, কোনো গার্মেন্টস মালিক চাঁদাবাজির শিকার হলে তারা যদি পুলিশের শরণাপন্ন হয়, তাদের আইনগত সহায়তা দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জে ৮ শতাধিক রফতানিমুখী পোশাক কারখানায় ১৫ লাখের বেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন।