বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে কিছু নিত্যপণ্যের শুল্ক-কর কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উদ্দেশ্য হলো, দাম কমানো। তবে বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক কমানোর পাশাপাশি সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ দরকার। নইলে সুফল পাওয়া যাবে না।
শুরুতে আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক-কর কমছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আজ সোমবার পণ্য দুটির শুল্ক-কর কমানোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে। ডিম ও চিনি আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোর বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ ও আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
আলু ও পেঁয়াজের শুল্ক-কর কমানোর বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রজ্ঞাপন জারি করার প্রক্রিয়া চলছে
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান
আলু, পেঁয়াজ ও ডিম আমদানির শুল্ক কমানোর বিষয়ে গত ২৯ আগস্ট এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। এতে পণ্য তিনটি পণ্যের শুল্ক কমানোর পটভূমি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বন্যার কারণে পেঁয়াজ, আলু ও ডিম সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে এবং পণ্যগুলোর দাম বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, এসব পণ্যের দাম আরও বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আলু ও পেঁয়াজের শুল্ক-কর কমানোর বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রজ্ঞাপন জারি করার প্রক্রিয়া চলছে।’ ডিমের ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
দেশে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চমূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যে হিসাব দেয়, তার চেয়েও মূল্যস্ফীতি বেশি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিবিএস জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতির হিসাব প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, সাম্প্রতিককালে প্রথমবারের মতো মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছাড়িয়েছে। গত জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে ১৪ শতাংশ, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ট্যারিফ কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির অন্যতম উৎস ভারত। কিন্তু ভারত সরকার পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৫৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণের পাশাপাশি ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সূত্র বলছে, ওই বৈঠকে কয়েকটি পণ্যের শুল্ক-কর কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই ট্যারিফ কমিশন এনবিআরকে পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোর জন্য চিঠি দিয়েছে।
বর্তমানে পেঁয়াজের ওপর ১০ শতাংশ এবং ডিম ও আলু আমদানিতে ৩৩ শতাংশ করে শুল্ক-কর রয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির অন্যতম উৎস ভারত। কিন্তু ভারত সরকার পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৫৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণের পাশাপাশি ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছে। ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর শুল্ক-কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হলে আমদানি উৎসাহিত হবে, বাজারমূল্যও কমবে।
ডিম ও আলু বর্তমানে শর্ত সাপেক্ষে আমদানির অনুমতি দেওয়া আছে। পেঁয়াজ আমদানি উন্মুক্ত। ট্যারিফ কমিশনের চিঠিতে জানানো হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পেঁয়াজ থেকে সরকার ৪৩০ কোটি টাকা, আলু থেকে ৭৮ কোটি টাকা এবং ডিম থেকে ২ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) থেকে তথ্য নিয়ে বিটিটিসি এনবিআরকে জানিয়েছে, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম এক বছরে ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। বাজারে এখন এক কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ১০০-১১৫ টাকা। ডিমের দাম এক বছর আগের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি। তবে এক মাস আগের তুলনায় বেড়েছে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। বিক্রি হচ্ছে হালিপ্রতি ৫০-৫৩ টাকা দরে। আর আলুর দাম ৫২ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগেও এমন দামই ছিল। তবে এক বছর আগের তুলনায় আলুর দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশ।
কনজু্যমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরবরাহব্যবস্থার উন্নতি না হলে শুল্ক-কর কমানোর সুফল ভোক্তার বদলে ব্যবসায়ীদের কাছেই যায়। সরবরাহের উন্নতি হবে উৎপাদন ও আমদানি—দুটিরই বৃদ্ধির মাধ্যমে। এ ছাড়া চাঁদাবাজি, রাস্তায় জট ও বন্দরে জটও বন্ধ করা চাই। পাশাপাশি দরকার বাজার তদারকি। তখন ভোক্তা কিছুটা সুফল পেতে পারে।