কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে হারে ঋণ দেয় তাকেই পলিসি রেট বা রেপো রেট বলে।
দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে দেশের অর্থনীতি। একইসঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ধারাবাহিকভাবে কমছে। মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ বাড়াতে আবারও নীতি সুদহার বা পলিসি রেট বাড়াতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বিষয়টি উত্থাপন করেন।
সেদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং তিনি পলিসি রেটের বিষয়টি তুলে ধরেন।
কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে হারে ঋণ দেয় তাকেই পলিসি রেট বা রেপো রেট বলে।
সম্প্রতি সালেহউদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর তাকে বলেছেন তারা পলিসি রেট বাড়ানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন।
এজন্য গভর্নর কাজ করবেন জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টির সুরাহা না হলে প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ প্রত্যাশিত মাত্রায় নাও বাড়তে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পলিসি রেট আরও বাড়ানো উচিত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১১-১২ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ।
এর আগে, জুনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পরামর্শ দিয়েছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ বছরের মধ্যে পলিসি রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়াতে হবে। কারণ আগেও বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হয়নি।
আইএমএফ বলেছিল, মূল্যস্ফীতি এখনো ঊর্ধ্বমুখী ধারায় আছে। তাই এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাঝারি লক্ষ্যমাত্রা ৫ থেকে ৬ শতাংশে না আসা পর্যন্ত মুদ্রানীতি কঠোর রাখতে হবে।
আইএমএফ বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে মূল্যস্ফীতি সাত শতাংশে ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শেষে ৫ দশমিক ৫ শতাংশের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে পলিসি রেট চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো লাগতে পারে।
সরকার আইএমএফকে আশ্বাস দিয়েছিল মুদ্রানীতি আরও কঠোর করা হবে। কিন্তু জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও সেখানে পলিসি রেটে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
গত দুই বছর ধরে পলিসি রেট ধারাবাহিকভাবে বাড়িয়ে ঋণের সুদ বাড়ানো হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক দুই বছরে পলিসি রেট ৪০০ বেসিস পয়েন্টের বেশি বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে, তবে মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
দেশের অর্থনৈতিক সংকটে ক্রমবর্ধমান ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) একটি ধাক্কা হয়ে এসেছে। গত অর্থবছরে সিপিআই ৯ দশমিক ০২ শতাংশ হয়েছে, যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চলতি অর্থবছরেও একই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে এবং ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫ শতাংশের ওপরে আছে।
আগের মাসের তুলনায় জুলাইয়ে সিপিআই ১ দশমকি ৯৪ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েও চাপে আছে বাংলাদেশ। আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার জন্য যে শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে একটি হলো নির্দিষ্ট মাত্রায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা। তবে আইএমএফের শর্তের অনুযায়ী, রিজার্ভ ধরে রাখতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩১ জুলাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালের আগস্টে ছিল ৪১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এলেও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের বাজেট সহায়তা কিছুটা বেড়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে গত ৮ মে বিনিময় হারে পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিনিময় হার নমনীয় করতে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে।