ডিজিটাল অর্থনীতিতে পথ দেখাচ্ছে চীন

বিশ্বের কারখানা হয়ে ওঠা চীন এখন ডিজিটাল অর্থনীতিতেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে এগিয়ে যাওয়া দেশটির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে ডিজিটাল অর্থনীতি। এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় এশিয়ার নেতৃত্বে থাকা দেশটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রকেও পেছনে ফেলছে।

সম্পতি চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর এনডিবি প্রকাশিত ‘ডিজিটাল চায়না ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে চীনের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১০ শতাংশ ছিল ডিজিটাল অর্থনীতি।

ডিজিটাল অর্থনীতিতে দেশটির সাফল্যের ফলে অর্থনীতিতেও গতিশীলতা বেড়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে চীনের ডিজিটাল অর্থনীতি বেড়েছে ১২ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের (১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার) বেশি। এতে চীনের জিডিপি দাঁড়িয়েছে ১২৬.০৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৭.৪ ট্রিলিয়ন ডলার)। জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫.২ শতাংশ, যদিও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ শতাংশ।

বিশ্বের ৪০ শতাংশ ডিজিটাল কারখানা

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চীন ৬২টি লাইটহাউস কারখানা স্থাপন করেছে, যা বিশ্বের ৪০ শতাংশ। এসব ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানার বিশেষত্ব হলো, এগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক মানের প্রযুক্তি ও ডিজিটাইজেশন। এতে কারখানাগুলোর উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা ও স্থায়িত্ব বেড়েছে।

টানা ১১ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন খুচরা বাজারও চীনের। গত বছর দেশটির অনলাইন বিক্রি ১১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৫.৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।

বিশ্বের ৫জি স্টেশনের ৬০ শতাংশ

২০২৩ সালে চীনে ৫জিভিত্তিক স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩.৩৮ মিলিয়ন, যা এক বছরে বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। এই সংখ্যা বিশ্বের মোট ৫জি স্টেশনের ৬০ শতাংশ। দেশটিতে ৫জি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০৫ মিলিয়ন, যা মোট ব্যবহারকারীর ৪৭ শতাংশ।

চীনের কম্পিউটিং সক্ষমতা গত বছর বেড়ে হয়েছে ২৩০ ইএফএলওপিএস।

এতে দেশটির অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। দেশটিতে রয়েছে ১৫টি জাতীয় সুপারকম্পিউটার সেন্টার। ২০২৩ সালে চীনের উচ্চ প্রযুক্তির ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে বিনিয়োগ বেড়েছে ৯.৯ শতাংশ। এর পাশাপাশি উচ্চ প্রযুক্তির সেবা বেড়েছে ১১.৪ শতাংশ।

এশিয়াকে পথ দেখাচ্ছে

২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত ‘এশিয়া ডিজিটাল অর্থনীতি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে এশিয়ার ১৪ দেশের সম্মিলিত ডিজিটাল অর্থনীতি দাঁড়িয়েছে ১২.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে চীন। দেশটির ডিজিটাল অর্থনীতি ৭.৪৭ ট্রিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপান, দেশটির ডিজিটাল অর্থনীতি ২.৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার ডিজিটাল অর্থনীতি ৯৫২.৩ বিলিয়ন ডলার। শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ভারত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ইসরায়েল ও মালয়েশিয়া।

বিনিয়োগের হটস্পট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

চীনে বিনিয়োগের নতুন হটস্পট হয়ে উঠেছে জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এর তিনটি উপক্ষেত্রে (সাধারণ বৃহৎ মডেল, মেটাভার্স বা ডিজিটাল মানব এবং এআই চিপ) গত বছর সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন এসেছে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতি সম্মেলনে এনডিবির পরিচালক লি লিহংগ বলেন, ‘ভূমি, মূলধন ও প্রযুক্তির পথ ধরে ডাটাও ক্রমান্বয়ে উৎপাদনশীলতায় মূল্য সংযোজনের নতুন উৎস হয়ে উঠেছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের এআই বিপ্লব ডিজিটাল অর্থনীতি ও শিল্প বিপ্লবকে একটি নতুন ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাবে। এআই প্রযুক্তিগুলো বিস্তৃত শিল্পে রূপান্তরিত হচ্ছে এবং চীনের পাশাপাশি বিশ্বের অর্থনীতিতে আরো প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে।

টেসলার সিইও ইলন মাস্ক বলেন, ‘ভবিষ্যতে চীন শক্তিশালী এআই দক্ষতা অর্জন করবে।’ আর চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে হংকং ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের লিউ হংবিন বলেন, ‘এআই সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলোতে কর্মরত লোকের সংখ্যা, বিপুল পরিমাণ এআই ডাটার সুবিধা, উন্নত এআই অবকাঠামো এবং সরকারের সহায়ক নীতির পরিপ্রেক্ষিতে চীন ২০৩০ সালের মধ্যে এআইতে বিশ্বকে শাসন করবে।’

ডিজিটাল মুদ্রায় নেতৃত্বে চীন

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র যখন ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে পরিকল্পনায়ই রয়ে গেছে, তখন ডিজিটাল মুদ্রা চালু করে বিশ্বে নেতৃত্বের আসনে এখন চীন। ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রথম চার শহরে পরীক্ষামূলক স্থানীয় মুদ্রা ইউয়ানের ডিজিটাল সংস্করণ ডিসিইপি (ডিজিটাল কারেন্সি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট) চালু করে দেশটি। সূত্র : রয়টার্স, সিএনএন বিজনেস, চায়না ডেইলি

Scroll to Top