black money

সমালোচনার পরও থাকছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

বড় কোনো সংশোধনী ছাড়াই আগামী শনিবার জাতীয় সংসদে অর্থ আইন পাস হচ্ছে। আগামী রবিবার পাস হবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ব্যয় নির্দিষ্টকরণ বিল। পরদিন ১ জুলাই থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ব্যক্তি ও কম্পানির কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ ও সমালোচনা থাকলেও তা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

অনেকে ব্যক্তি খাতে এই সুবিধার বিপক্ষে ছিলেন। তবু অপ্রদর্শিত অর্থনীতির মূলধারায় আনতে এই আইন অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
চলতি অধিবেশনের শুরুতে গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের সময় ধীরে ধীরে কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে এনবিআরকে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। একই সঙ্গে আইন সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের গাড়িতে শুল্ক আরোপ করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

কিন্তু আইন সংশোধন না হওয়ায় অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবে সংসদ সদস্যদের গাড়িতে শুল্ক আরোপের বিষয়টি আর কার্যকর হচ্ছে না। এতে এমপিরা আগের নিয়মেই শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারবেন। এর বাইরে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ছোটখাটো দু-একটি বিষয় ছাড়া তেমন কোনো বড় সংশোধনীর সম্ভাবনা নেই বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। আগামী অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল থাকছে।

যদিও নানা মহল থেকে এই প্রস্তাব বাতিল করার দাবি উঠেছিল। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রক্ষিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর অবকাশ সুবিধা বহার রাখা হচ্ছে। যদিও বাজেট প্রস্তাবে এ সুবিধা তুলে কর আরোপের কথা বলা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটের পরিবর্তন বিষয়ে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তনের ব্যাপারে অনুমোদন দিয়েছেন।

সংশোধনীসহ অর্থ বিল আজ বৃহস্পতিবার সংসদে অর্থ আইন হিসেবে পাস হওয়ার কথা।
এদিকে পর্যায়ক্রমে কর অব্যাহতি কমিয়ে কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

আন্তর্জাতিক এই সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, আইন প্রণেতাদের গাড়ি আমদানিতে থাকা কর অব্যাহতি তুলে নেওয়ার মাধ্যমে এ কার্যক্রম জোরদার করতে চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে আইন প্রণেতাদের এই সুবিধা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার প্রস্তাবটি সংসদে পাস না হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এমনকি আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের আগে আইন প্রণেতাদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় প্রত্যাখ্যান করেছিল।

এর পরও বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক-কর অব্যাহতি আছে। সব স্তরে অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সবাইকে রাজস্ব দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য শুল্ক-কর ছাড়া গাড়ি আমদানির নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন একটি মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এই উদ্দেশ্যে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অব্যাহতির সুবিধা পরিবর্তন করা যেতে পারে। এই লক্ষ্যে সংসদ সদস্যদের (পারিশ্রমিক ও ভাতা) আদেশ ১৯৭৩-এ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি বাতিল করতে হলে ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডার সংশোধন করতে হবে। তাহলে এ ধরনের গাড়ি আমদানিতে কর আরোপ করা যাবে। তিনি বলেন, এনবিআর সংবিধিবদ্ধ রেগুলেটরি অর্ডার (এসআরও) জারির মাধ্যমে দেশে বিদ্যমান কোনো আইনকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।

দেশে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। এমনকি সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ এখন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর আরোপ করা হলে বিনিয়োগ কমে আরো শোচনীয় পর্যায়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে হাই-টেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে কর অবকাশ অব্যাহত রাখা হতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই অঞ্চলগুলোর মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছিল। তবে তা আগের মতো ০ শতাংশ হতে পারে।

এর আগে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থমন্ত্রী শুধু বেসরকারি ইজেড এবং হাই-টেক পার্কগুলোর জন্য কর আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন। তবে সরকারি হাই-টেক পার্ক এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে কর অবকাশের আওতায় রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে সুবিধা বাতিলের প্রস্তাব করেছিলেন তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ওপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আপত্তি থাকলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সংশোধনী বাজেটে আগের মতোই ৫০ লাখ টাকা লাভের ওপর কর আরোপের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

Scroll to Top