লোডশেডিংয়ের সমস্যা থাকলেও সারা দেশ এখন বিদ্যুতের আওতায়। বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থায় সমস্যা রয়েছে, তা ঠিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা এখনই কমবে না, তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। জ্বালানি খাতে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণের অভাব রয়েছে। অব্যবস্থাপনার কারণে জ্বালানি খাতে দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতি না কমলে বাজেটে জ্বালানি খাতে বরাদ্দ দিয়ে লাভ নেই।
রোববার (জুন ২৩) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ডায়ালগ অন পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টর ইন দি ন্যাশনাল বাজেট ২০২৫: চ্যালেন্জস অ্যান্ড প্রপোজড মেজারস’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আলোচকরা।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য এ কে আজাদ।
আলোচনায় বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ। দেশের শতভাগ এখন বিদ্যুতের আওতায়। লোডশেডিং থাকলেও গ্রামের সাধারণ মানুষ কিন্তু বিদ্যুৎ পাচ্ছে। তবে আমাদের দেশের সমস্যা হলো প্রাইমারি এনার্জি ক্রাইসিস।
তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের দেশ জ্বালানি আমদানি নির্ভর, তাই বিশ্ববাজারে দাম কমলেও অনেক সময় ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তার সুফল পেতে আমরা ব্যর্থ হই। তিনি বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আস্তে আস্তে সমস্যা কেটে যাবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের আগ্রহের অভাব নেই উল্লেখ করে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বলেন, আমরা আরও বেশি সংখ্যক সোলার প্ল্যান্ট করার জন্য জায়গা খুঁজছি। ইতোমধ্যেই জামালপুরে ২০ হাজার একর জায়গায় সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট করার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
এখনই জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আমাদের নির্ভরতা কমবে না উল্লেখ করে বুয়েটের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, আমাদের দেশে এখনও সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্ল্যান্ট রয়েছে। তাই আমরা কয়লা থেকে এখনই সরতে পারবো না। জ্বালানি ক্ষেত্রে বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের আরও ২০-২৫ বছর জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা প্রথমে পরিকল্পনা করি, তারপর নীতি নির্ধারণ করি, নীতি নির্ধারণ করে পরিকল্পনা করি না। আমরা জ্বালানি খাতে ফায়ার ফাইটিং করছি। অথচ কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা হচ্ছে না। আমাদের এখন জ্বালানি খাতে সুস্পষ্ট নীতি নির্ধারণ করতে হবে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি খাতে সংস্কারের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা সরকারের নেই। বিইআরসির কাঠামোতে কোনো দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি নেই। এনার্জি ট্রানজিশনের ক্ষেত্রে সরকারের সুস্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা বা ধারণা নেই। জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার কারণে এই খাতে লুণ্ঠন হচ্ছে। জ্বালানি খাতে দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের ব্যাপারে ভোক্তাদের মতামতের কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও, এই খাতে লুণ্ঠন বন্ধ না হলে এই বরাদ্দ কোনো কাজে আসবে না।
বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের রেক্টর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিশেষ করে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনে ট্যাক্স, ভ্যাটের বোঝা কমানো হলে এই খাতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে হতাশ হওয়া যাবে না, কারণ হাঁটি হাঁটি পা পা করে এই খাতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রুফটপ সোলার প্ল্যান্ট স্থাপিত হয়েছে চট্টগ্রামে। তিনি বলেন, দেশে যে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন হবে তা ২০১০ সালের আগে কল্পনাও করা যায়নি।
তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সমর্থন করে তিনি বলেন, এলএনজিতে যাওয়া একটি বাস্তবতা। আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর এখনও পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে পারিনি। এলএনজি কয়লার থেকে কম দূষণ করে। সরকার স্মার্ট গ্রিড স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছে বলে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।