বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য উচ্চতর বেতনকাঠামো থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে উল্টো সুযোগ-সুবিধা কমানো হচ্ছে। আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে যোগদানের পর ‘বাংলাদেশ ব্যাংককে অ্যাপেক্স রেগুলেটরি বডি’ করার ঘোষণা দিয়েছেন; কিন্তু কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা কমানো সেই ঘোষণার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে আজ সোমবার বিকেল চারটায় মতবিনিময় সভা আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স কাউন্সিল।
সভায় আলোচনার বিষয় উল্লেখ করে অফিসার্স কাউন্সিলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে সব সদস্যের কাছে এক পৃষ্ঠার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে সরকারি বিভিন্ন বিভাগ, প্রতিষ্ঠান বা বাহিনীর পদোন্নতিসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা কমানোর সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমান গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংককে অ্যাপেক্স রেগুলেটরি বডি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা এত দিন শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেলেও এখন তা আর নেই। বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের ফলাফলের ভিত্তিতে অতিরিক্ত যে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতো এবং ট্রেনিং একাডেমির কর্মকর্তাদের ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে যে ভাতা দেওয়া হতো, তা বাতিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের কর্মকর্তাদের বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণ, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগের সময় একাডেমিক ফলাফলের ভিত্তিতে যে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতো, তা–ও বাতিল করা হয়েছে। যেকোনো সুবিধা কমানো হলে নিশ্চিতভাবেই কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টি ও কর্মস্পৃহায় প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাংককে শীর্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিণত করার যে লক্ষ্য গভর্নর ঘোষণা করেছেন, উল্লিখিত বিষয়গুলো তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রশাসন ক্যাডারে উপসচিব পদে তিন বছর চাকরি পূর্ণ হলে, সশস্ত্র বাহিনীর মেজর ও সমমান কর্মকর্তা, এমআরএ, তিতাস গ্যাস, পিএকেএসএফসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সমমানের সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা বা সার্বক্ষণিক গাড়িসুবিধা পান। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সবার গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা একই হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক, পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকদের আলাদা ভাতা দেওয়া হয়। বর্তমান কাউন্সিল নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এসব সমাধানের জন্য আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন আলোচনায় গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি বারবার আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়নি। এ অবস্থায় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা বলেন, একদিকে ব্যাংক খাতে তদারকি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে; দুর্বল ব্যাংকগুলোকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিনিয়ত জামানত ছাড়া তারল্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এবং আরেক দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিয়ে কোণঠাসা করে ফেলা হচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে কখনো এমন পরিস্থিতি হয়নি। অথচ আর্থিক সংকট কাটাতে আমাদেরই প্রধান ভূমিকা রাখার কথা ছিল।