বছর বছর বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়লেও বাড়ছে না রেমিট্যান্স। গত দুবছরে প্রায় ২৫ লাখ জনশক্তি দেশের বাইরে গেলেও প্রবাসী আয় থমকে আছে আগের জায়গায়। বৈধভাবে অর্থ পাঠাতে বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দেশীয় ব্যাংকগুলোর চুক্তির পরামর্শ ব্যাংকারদের। আর আসন্ন বাজেটে প্রণোদনায় বরাদ্দ বাড়ালে রিজার্ভের পাল্লা ভারী হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
রফতানি আর রেমিট্যান্সে ভর করেই শক্ত অবস্থানে দেশের অর্থনীতি। তবে রফতানির পাল্লা ভারী হলেও বছরের পর বছর একই অবস্থানে প্রবাসীয় আয়ের চিত্র। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার ৩৪ জন। এর মধ্যে ২০২২ সালেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন।
পরবর্তী এক বছরে এ সংখ্যায় যোগ হয়েছে আরও ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন। আর চলতি বছরের প্রথম চার মাসে যোগ হয়েছে ৩ লাখ ২২ হাজার ২৩৭ জন। বর্তমানে প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ।
বছর বছর বাড়ছে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর প্রবণতা। কিন্তু রেমিট্যান্স আয় পড়ে আছে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের ঘরেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ ডলার ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এসেছে ১ হাজার ৯১১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।
কেন বাড়ছে না রেমিট্যান্স — এমন প্রশ্নে অর্থনীতিবিদদের মত, আসছে বাজেটে জোর দিতে হবে দক্ষতা উন্নয়ন, আর বাড়াতে হবে প্রণোদনা। এতে আয় বাড়বে ৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন, প্রবাসী আয় বাড়াতে শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে; পাশাপাশি প্রণোদনার পরিমাণও।
আর ব্যাংকাররা বলছেন, প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থাপনা সহজ করতে ব্যাংকের শাখা নয়, চুক্তি করতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ব্যাংকের সঙ্গে। বাড়ি বাড়ি সচেতনতা সৃষ্টির পরামর্শও দিয়েছেন তারা। সাবেক ব্যাংকার মো. জাকির হোসাইন বলেন, বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোয় প্রবাসী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সচেতন করতে হবে। এজন্য জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে হবে।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বাংলাদেশি ব্যাংকের শাখা বিদেশে স্থাপনের প্রয়োজন নেই। যেসব দেশ থেকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠায়, সেসব দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।
প্রবাসী আয় বাড়ানোর জন্য রেমিট্যান্স পাঠানোদের অ-আর্থিক সুবিধা হিসেবে স্বদেশে ফিরে এলে কর্মসংস্থানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি সেবা, বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা দেয়াসহ সব ধরনের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার দিকেও গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।