ডলারের দাম একলাফে ৬.৩৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানির খরচ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই চাপ মোকাবেলায় সরকারকে ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমদানিতে সরাসরি ডলারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমদানিকারকরা ডলারের বেশি দাম নিয়ে চিন্তা করছেন না, যেকোনো মূল্যে তাঁদের ডলার চাই। অথচ বেশি দাম নিয়েও ডলার দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বেশি খরচ দিয়ে পণ্য আমদানি করে উৎপাদন করতে চাইলেও তা করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। কারণ ব্যবসায়ীরা ডলার পাচ্ছেন না।’ উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় অপ্রয়োজনীয় বিলাস পণ্য আমদানি পুরোপুরি বন্ধ এবং ডলার ছাড়াও অন্য দেশের সঙ্গে মুদ্রাচুক্তিতে (কারেন্সি সোয়াপ) যাওয়ার পরমর্শ দিয়েছেন এই ব্যবাসী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, ‘ব্যাংকগুলো এলসি খোলার গতি কমিয়ে দিয়েছে। যেসব রপ্তানিকারকের ডলার অ্যাকাউন্টে জমা আছে, বর্তমানে শুধু তাঁরাই আমদানির দায় পরিশোধ করতে পারছেন। এর বাইরে যাঁরা ব্যাংক থেকে ডলার কিনে আমদানি বিল পরিশোধের চিন্তা করছেন, তাঁরা সবাই ফিরে যাচ্ছেন। কারণ বেশির ভাগ ব্যাংকের কাছেই ডলার জমা নেই। আবার যাঁদের কাছে আছে তাঁরা ভবিষ্যৎ আমদানি পেমেন্টের কথা চিন্তা করে ডলার খরচ করছেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ার কথা শুনে বিদেশ থেকে যাঁরা নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠাতেন তাঁরা সেটা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে আমরাও রেমিট্যান্সের ডলার দিয়ে আর আমদানির পেমেন্ট করতে পারছি না। প্রবাসীরা ভাবছেন ডলারের দাম আরো বাড়বে। তাই তাঁরা ডলার ধরে রেখেছেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার ইনফ্লো কমে যাওয়া বাংলাদেশে ডলার সমস্যার প্রধান কারণ। যত দিন ডলার ইনফ্লো না বাড়ছে তত দিন সংকট কাটবে না। ডলারের আউটফ্লো কমাতে আমদানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে কত দিন চলবে? দেশের প্রয়োজনেই একটা সময় এই সীমা তুলে দিতে হবে। কারণ বিদেশ থেকে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি না করলে দেশের উৎপাদন ব্যাহত হবে। কমে যাবে কর্মসংস্থান। তার সঙ্গে কমে যাবে জাতীয় প্রবৃদ্ধি। তাই আমদানিতে আরোপ করা এই সীমা একটা সময় উঠিয়ে দিতে হবে।’