দাবদাহে ক্ষতির কারণে খামার মালিকরা মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ার যে আভাস দিয়েছিলেন, তাই ঘটেছে।
এপ্রিলে তীব্র গরম পড়ার আগে আগে টাঙ্গাইলের সখিপুরের জাকিয়া পোল্ট্রি ফার্মের কর্ণধার জাহিদ হোসেন প্রতিটি ডিম বিক্রি করেছেন ৮ টাকা ১০ পয়সা করে। এখন দাম পাচ্ছেন ১০ টাকা ৫ পয়সা হিসাবে।
এই ১ টাকা ৯৫ পয়সা বাড়তি দর তার গত এক মাসের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে আছে সংশয়।
জাহিদের খামারে ডিম পাড়ার মুরগি ছিল ২৫ হাজার। ডিম পেতেন প্রায় ২২ হাজারের বেশি। মুরগির বিপরীতে উৎপাদন ছিল ৮৮ শতাংশ।
এখন ২০ হাজার মুরগিতে দিনে ডিম আসে ১৫ থেকে ১৬ হাজার, উৎপাদনের হার নেমেছে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশে। ফলে বেড়েছে উৎপাদন খরচ।
“যখন ৮ টাকা করে পেতাম, তখন দুই মাসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে লস হইছে। এটা শুধু ডিমেই লস। আর মুরগি মারা গেছে সেটা আলাদা লস। এখন যে টাকা পাচ্ছি এ রকম পেলে আগের লস কিছুটা পূরণ হবে। তবুও লস থেকে যাবে।”
এপ্রিলে দাবদাহে পোলট্রি খাতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। মাসের শেষে মুরগির খামার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন-বিপিএ জানিয়েছিল, সারা দেশে দিনে এক লাখের মত মুরগি মরেছে।
গত ২৬ এপ্রিল এই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সমিতি এও শঙ্কা প্রকাশ করে যে, এর প্রভাব পড়তে পারে মুরগি ও ডিমের দামে। ঘটেছেওতাই।
দুই সপ্তাহের মধ্যে ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ২০ থেকে ২৪ টাকা, ব্রয়লার মুরগির কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকার মত। আর সোনালি মুরগির দাম বছর চারেক আগের দেশি মুরগির দামকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কেজিপ্রতি দাম হয়ে গেছে ৪০০ টাকা।
ডিমের দামে কী চিত্র
এপ্রিলের শেষে ডিমের দাম ছিল পড়তি। হালি নেমে এসেছিল ৪০ টাকায়। এখন ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৪৮ টাকা।
বৃহস্পতিবার ঢাকার পাইকারি বাজারেই দাম ছিল ৪৫ টাকা ২০ পয়সা। খামার পর্যায়ে দাম ছিল ৪০ টাকা ২০ পয়সা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণায় জানিয়েছে, গত অর্থবছরে দেশে মাথাপিছু ডিমের প্রাপ্যতা ছিল ১৩৪টি। এই হিসাবে প্রতিটি ডিমের জন্য দুই টাকা বাড়তি দরে খরচ বাড়বে ২৬৮ টাকা।
দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজারে পূর্ণ প্রতিযোগিতা আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন নতুন না। পাইকারি আড়ত ও খামার পর্যায়ে এই দাম নির্ধারণের বড় কোম্পানিগুলোই পালন করে মুখ্য ভূমিকা।
তারা এসএমএসে দাম জানিয়ে দিলে বাকিরা তা যে অনুসরণ করে, সেটি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সেমিনারে একাধিকবার বলা হয়েছে। এভাবে এসএমএসে দাম জানানো গ্রহণযোগ্য না- এমন কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সমাধান হয়নি।
বাজারে কাজী ফার্মস, সিপি বাংলাদেশ, প্যারাগন, আফতাব বহুমুখী ফার্মস, বাংলাদেশ হ্যাচারিসহ বেশ কয়েকটি বড় ডিম উৎপাদনকারী কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো নিজস্ব পরিবেশকদের মাধ্যমে ডিম সরবরাহ করে।
আর ঢাকার তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও মিরপুর, গুলিস্তানের কাপ্তান বাজারের মুরগি পট্টিসহ অন্যান্য পাইকারি বাজার দেশের বিভিন্ন এলাকার খামারিদের কাছে থেকে ডিম ও মুরগির সরবরাহ পায়।
আড়তদাররা বলছেন, গরমে মুরগি মারা যাওয়ায় খামারি পর্যায় থেকে দাম বেড়ে গেছে।
যাত্রাবাড়ীতে ডিমের আড়ত লাকসাম ট্রেডার্সে ডিম কিনতে আসা খাবার হোটেল ব্যবসায়ী রহিম সরকার বলছেন “আমার দিনে ৫০টা ডিম লাগে। দুই দিনের লাইগ্যা একলগে ১০০টা কিনি। এক মাস আগেও ৯৪০ টাকায় কিনছি। এহন আইজ ১১৩০ টাকা দিতে হইব।
“আমরা তো দরদাম করি না। পাইকারি যা দাম তাই রাহে, ডিম নিতে আইলে হেরা গইন্যা দেয়, আমি টাকাডা গুইন্যা দেই।”
লাকসাম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আল-আমিন বলেন, “আমরা তো ছোটো পাইকার। দিনে ১০ থেকে ২০ হাজার ডিম বিক্রি করি। সপ্তাহখানেক আগেও এক হাজার ৮০ টাকায় ১০০ ডিম আনতে পারতাম। আইজকা (বৃহস্পতিবার) বিক্রি করতাছি ১ হাজার ১৩০ টাকা দরে। দাম বাড়লে আমাগো না বাড়াইয়া উপায় আছে?’’
প্রতি হাজারে ২০ থেকে ৩০ টাকা মুনাফা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে ভেঙে যাওয়া, নষ্ট, দাগ পড়া ডিমও বাদ দিতে হয়।