চালের দাম কমেছে

পাইকারী ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেশ কমেছে। গত সাত দিনে মোটা, মাঝারি ও সরু চালের দাম কেজিতে আরও ২ থেকে ৩ টাকা করে কমেছে। হাওরে অকাল বন্যা এবং উত্তরাঞ্চলে বন্যার পর চালের দাম একটানা বাড়তে থাকে। চালের দাম কমানোর জন্য আমদানি শুল্ক কমানোসহ নানামুখি পদক্ষেপ নেয় সরকার। এরপর চালের দাম কমতে শুরু করে। গত এক মাসে ধীরে ধীরে চালের দাম কেজি প্রতি প্রায় ১০ টাকা কমেছে। চালের দাম আরও কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গত সেপ্টেম্বর মাসে চালের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছিল। এখন চালের দর অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, আমন ধানের চাল বাজারে আসা শুরু হলে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকায় নামতে পারে।

তিনি বলেন, বাজারে চালের ঘাটতি ছিল। সরকার যথা সময়ে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়। এ কারণে আমদানি হয়েছে ব্যাপক। ফলে চালের দাম কমছে। আগামীতে আরও কমবে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল, মগবাজার, মিরপুর শাহআলী ও কারওয়ানবাজারের খুচরা দোকানে সোমবার মোটা চাল স্বর্ণা ও গুটি ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, মাঝারি চাল বিআর ২৮ ও লতা ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা, সরু চাল মিনিকেট মানভেদে ৫৪ থেকে ৬০ টাকা ও নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। বস্তা হিসেবে কিনলে আরও কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।

দোকানিরা জানান, প্রতি সপ্তাহে চালের এক টাকা দুই টাকা করে কমছে। গত এক সপ্তাহে সব ধরণের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে।

খুচরায় গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি চালের দর বেড়ে প্রতিকেজি মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা ও মাঝারি মানের বিআর ২৮ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা এবং সরু চাল মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৫ টাকা ও নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

ব্যবসায়ীদের মতে, চালের সরকারি গুদামে মজুদ কমে যাওয়ায় বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এখন চালের মজুদ বাড়ছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানিও অনেক বেড়েছে। এদিকে নতুন মৌসুমের আমন ধান কাটা হচ্ছে। এ কারণে চালের দাম কমছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, আমন মৌসুমের চাল সরকারের মজুদ বাড়াবে। দু’সপ্তাহ পরে নতুন চাল বাজারে আসবে। তখন চালের দাম আরও কমবে বলে তিনি আশা করেন।

এদিকে চাল আমদানিকারকরা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। দাম কমে যাওয়ায় আমদানি করা চাল এখন লাভে বিক্রি করতে পারছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমদানিকারক জানান, চালের দাম বৃদ্ধির পরে থাইল্যান্ড থেকে ৫০ হাজার টন আমদানি করেছেন তিনি। আমদানি করা এখনও ২৫ হাজার টন চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে। ৪৫ টাকা কেজিতে আমদানি করা ভালমানের এ চাল দু’সপ্তাহ আগেও ৫০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব ছিল। কিন্তু এখন দর কমে যাওয়ায় কেনা দরেও নিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা না পাওয়ায় কিছুটা দর কমিয়ে বিক্রির জন্য তিনি এখন বাজারে বাজারে ঘুরছেন।

চাল বিক্রেতারা বলেন, থাইল্যান্ডের চালের সঙ্গে দেশি চালের মিল নেই। এ চাল কিনলে বিক্রি করা দূরহ হবে। এ কারণে তারা কিনছেন না।

চালের পাইকারী আড়তে মোটা চাল ৩৯ থেকে ৪০ টাকা, মাঝারি চাল ৪২ থেকে ৪৮ টাকা ও সরু চাল ৫১ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিলগেট ও মোকামেও আমদানি করা চালের দাম কমেছে। প্রতিকেজি মোটা চাল ৩৪ থেকে ৩৭ টাকা, মাঝারি চাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও সরু চাল ৪৮ থেকে ৫৬ টাকায় বিত্রিক্র হচ্ছে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লায়েক আলী বলেন, চাল আমদানি দিন দিন বাড়ছে। দু‘সপ্তাহ পরে মৌসুমের নতুন মোটা চাল আরও কমে বিক্রি হবে।

তিনি বলেন, এভাবে আমদানি অব্যাহত থাকলে দাম আরও কমে যাবে। মৌসুমের আগে চাল আমদানিতে শুল্ক না বাড়ালে কম দামে ধান বিক্রি করতে হবে। ফলে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য হারাবে।

এ বিষয়ে সরকারের এখন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। বর্তমানে প্রতি মণ ধান ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে দাম বেড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে ১৪ লাখ ৬৪ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। শুধু বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৬৩ হাজার টন।

খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ নভেম্বর সরকারি গুদামে পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। চলতি অর্থবছরের মধ্যে এ মজুদ সর্বোচ্চ। বর্তমানে সরকারি গুদামে মজুদ চাল ৪ লাখ ১১ হাজার টন ও গম ১ লাখ ২৫ হাজার টন। আর বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে এক লাখ ৫৪ হাজার টন চাল-গম। আরও কয়েক লাখ টন আমদানি প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়ঃ ০০৫২ ঘণ্টা, ০৭ নভেম্বর , ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি