দেশে শিশুখাদ্যের দাম বেড়েছে। ফর্মুলা দুধ থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাত দানাদার খাদ্য- সব ধরনের শিশুখাদ্যের দাম তিন থেকে ছয় মাসের ব্যবধানে অনেকটাই বেড়ে গেছে। এতে বুকের দুধ অপর্যাপ্ত মায়েরা সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়া নিয়ে চিন্তায় আছেন। বাচ্চার জন্য দুধ কিনতে অন্য খরচে কাটছাঁট করতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষের।
শিশুখাদ্য গুঁড়া দুধের বাজার যাচাইয়ে কথা হয় রাজধানীর বনশ্রী এলাকার একটি ফার্মেসির বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে। তিনি জানান, এক বছর আগে যে গুঁড়া দুধের প্যাকেটের দাম ৪৯০-৫০০ টাকা ছিল, তা এখন ৬৭০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮৫০ টাকার দুধ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। বিভিন্ন কোম্পানির শিশুখাদ্য বাজারে আছে। এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি নেসলের পণ্য যেমন আছে, তেমনি আছে নিউট্রিসিয়াসহ অন্যান্য কোম্পানির তৈরি করা শিশুখাদ্যও।
শিশুখাদ্য বিক্রেতারা জানান, ছয় মাস আগে নেসলে কোম্পানির সেরেলাক তিন ধরনের ফলের প্যাকেটের দাম ছিল ৩৬০ টাকা। বর্তমানে তা ৪১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৩৫০ টাকার ভাত-দুধ ৪০০ টাকা, ৩৫০ টাকার গম-দুধ ৪০০ টাকা, ৪০০ টাকার গম-আপেল-চেরি ৪২৫ টাকা ও ৪৮০ টাকার ৫ ধরনের ফলের সেরেলাক ৫২৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
শিশুখাদ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নেসলে বাংলাদেশের পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) দেবব্রত রায় চৌধুরী বলেন, সাত মাস আগে দাম বাড়ানো হয়েছে। ডলারের দাম বাড়া ও উচ্চ হারের ট্যাক্সের কারণে দাম বাড়ানো হয় তখন। এ ছাড়া প্রিমিয়াম কোয়ালিটির পণ্য উৎপাদন করতে গেলে খরচও বেশি হয় বলে জানান তিনি। শিশুখাদ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ডলারের দাম বেশি। এ জন্য আমদানি করা পণ্যের দামও বেশি। তবে সরকারের উচিত হবে ট্যাক্স ও ভ্যাট কমিয়ে মানুষের নাগালে রাখা।
বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় সব শ্রেণির ক্রেতার নাভিশ্বাস ওঠার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে নাজেহাল করছে। এর মধ্যে শিশুখাদ্যের বাজার হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে হয়রানি করছে কি না, তা তদারকি সংস্থার ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। ডাক্তাররা শিশুদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে বলেন। এজন্য বুকের দুধের পাশাপাশি তাকে সেরেলাক, সুজি, বাদাম ও খেজুর খাওয়ানো হয়। কিন্তু শিশুখাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। এজন্য পরিবারের খরচ বেড়ে গেছে। তাই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। যে ব্যক্তি আগে ৭০০ টাকা দিয়ে এনএএন দুধ কিনতো। এখন ৯০০ টাকা হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই এনএএন বাদ দিয়ে ল্যাকটোজেন খাওয়াতে হচ্ছে। তবে গত বছরের তুলনায় ল্যাকটোজেনের দামও বেড়েছে। এছাড়া শুধু দুধ নয়, বাচ্চাদের সব ধরনের খাবারের দাম বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এখন বাচ্চাদের খাবারেও কাটছাঁট করতে হচ্ছে।
এদিকে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি পুষ্টিকর কিছু খাবার খাওয়াতে হয়। এজন্য কিছু সাবলিমেন্টারি দুধ আইটেম খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। তবে এসব পণ্যের দাম বাড়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত বেশির ভাগ পরিবার সন্তানদের পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই শিশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে দীর্ঘমেয়াদে শিশুদের পুষ্টি ঘাটতি তৈরি হতে পারে। বাজারে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে শিশুখাদ্যের মূল্য তদারকি করা না হলে সংকটে পড়তে হবে। এ ধরনের সংকট মোকাবিলা করা না হলে ভবিষ্যতে একটি পুষ্টিহীন প্রজন্ম গড়ে উঠবে।