মুন্সীগঞ্জে মোটরসাইকেল কারখানা করছে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড হোন্ডা

বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড হোন্ডা বাংলাদেশে মোটরসাইকেল তৈরি করবে। এ জন্য কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জাপানি অটোমোবাইলস কোম্পানিটি। হোন্ডার সঙ্গে এ কারখানা স্থাপনে যৌথ বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশি কোম্পানি বিএসইসির। ঢাকার পাশে মুন্সীগঞ্জে হবে এ কারখানা। এতে সংযোজনের পাশাপাশি উৎপাদনও করা হবে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২৫ একর জায়গায় এ কারখানা হবে। সেখানে আজ রোববার এটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

হোন্ডা মোটর কোম্পানি ও বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (বিএসইসি) যৌথ উদ্যোগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠা হয় বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড (বিএইচএল)। এ প্রতিষ্ঠানের ৩০ শতাংশ মালিকানা বিএসইসির ও ৭০ শতাংশ হোন্ডার। বর্তমানে যৌথ বিনিয়োগের এ কোম্পানি শ্রীপুরে একটি ভাড়া করা কারখানায় মোটরসাইকেল সংযোজন করছে। ২০১৩ সালে কোম্পানিটি সেখানে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আট হাজার ৭০০ বর্গমিটারের কারখানা স্থাপন করে। সেখানে বছরে এক লাখ মোটরসাইকেল সংযোজন করা হচ্ছে।

সংযোজন থেকে বেরিয়ে এসে এবার নতুন করে মোটরসাইকেল উৎপাদনে যেতে কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএইচএল। এতে প্রাথমিকভাবে ৩৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। পরে বিনিয়োগের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বাড়বে।

আগামী বছরের আগস্টের মাঝামাঝি কারখানার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে হোন্ডার। নতুন এ কারখানার অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি খাতে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয় হবে। কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তির সব জাপানি যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। মোটরসাইকেল তৈরির এ কারখানায় ওয়েলডিং, পেইন্টিং, সংযোজন, মোড়কজাতকরণ ও সংরক্ষণ করা হবে। এ কারখানায় প্রথম বছরে এক লাখ মোটরসাইকেল তৈরি করা হবে। পরে বছরে ১ লাখ ৩০ হাজার, তৃতীয় বছরে ১ লাখ ৯০ হাজার, চতুর্থ বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার, পঞ্চম বছরে ৩ লাখ মোটরসাইকেল তৈরি করবে কোম্পানিটি। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনায় এ কারখানায় প্রায় ১০ লাখ মোটরসাইকেল তৈরি করা হবে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৩০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে। পরে আরও ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে এটি অন্যতম বৃহৎ একটি বিনিয়োগ। দেশের জন্য এটি ইতিবাচক অগ্রগতি। সরাসরি বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়বে। তিনি বলেন, শুধু হোন্ডা নয়, অনেক বিদেশি কোম্পানি এ দেশে সরাসরি বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। শিগগিরই অনেক কোম্পানি কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু করবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সব দৃশ্যমান হবে।

আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক মো. আবদুল গফুর বলেন, তাদের জোনে প্রথম সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসছে হোন্ডা। প্রতিষ্ঠানটি আজ রোববার কারখানা স্থাপনের কাজের উদ্বোধন করবে। তিনি বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আরও কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। তাছাড়া নিজস্ব বিনিয়োগে কিছু শিল্প স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় তিন লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বাজার দখলে রয়েছে হোন্ডার। এ ছাড়া বাজাজ, হিরো, ইয়ামাহা, টিভিএস, জংশন, দেশি ব্র্যান্ড রানারসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে।

সরকার দীর্ঘদিন ধরে দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনের সুযোগ তৈরির জন্য বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছে। এ জন্য উৎপাদন, বাজার সম্প্রসারণ ও রফতানির সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়ে ২০১৬ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এ সুবিধায় চলতি বছরের চার মাসে আগের বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে বলে জানান সংশ্নিষ্টরা। মোটরসাইকেলের এ বাজার দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে। খবর সমকাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, ০৫  নভেম্বর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি