বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ

সংগৃহীত ছবি

রমজানে দুই বার টিসিবির পণ্য দেওয়া হবে, যেন মানুষের কোনো সমস্যা না হয়। এসময় টিসিবির কার্ড কিংবা পণ্য বিতরণে কোনো অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে দেশের খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি। আলু, চাল, পেঁয়াজ, মরিচ, ডিমসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং প্রাকৃতিকগত কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই মাসে (গত আগস্ট) সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা এর আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশে, যা এর আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত রোববার ‘কনজুমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই)’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

এদিকে মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন। আলু, ডিমসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে। সেই সঙ্গে বন্যা এবং অতিবৃষ্টির কারণে আগস্টে পণ্যের সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলোর একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। অল্প কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে তাদের হাতে বন্দি থাকে পণ্যের দাম।

বিবিএস-এর গত কয়েক বছরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২২ সালের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এছাড়া চলতি বছরের গত ছয় মাসে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় ছিল। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাজারের সংখ্যা বেশি। তবে বাজার ও পণ্য কোনোটিই বিবিএস এককভাবে নির্ধারণ করেনি। আইএমএফ, আইএলও-সহ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে তাদের সঙ্গে নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসব নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশ্বের কোথাও ফুড ও ননফুড আলাদা করে মূল্যস্ফীতি হিসাব করে না। খাদ্য আলাদা হিসাব করার কারণে প্রধান কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে গেলেই মূল্যস্ফীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তবে সব মিলিয়ে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ঘর পেরিয়ে যায়নি। গত বছরও আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল। এ সময়টায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংকট এখনো কাটেনি।

তবে অনেকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে। কিন্তু এই কমার প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে কিছুটা সময় নেয়। ফলে আগস্টে খাদ্যসহ সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সার্বিকভাবে বলতে গেলে বাজারের অবস্থা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।

যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, সেভাবে মানুষের বেতন বাড়ছে না। কিন্তু খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দামের কাছে অসহায় সবাই। দুর্বিষহ দিনযাপন করছে সাধারণ মানুষ। এদিকে জমিতে চাষাবাদ করতেও সার, তেল, সেচ, দিনমজুরসহ সবদিকেই খরচ বেড়েছে। ফলে জমিতে ফসল চাষ করেও লাভ পাওয়া যাচ্ছে না। সবদিক থেকেই আমাদের মতো নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের অবস্থা খুব খারাপ।

সবমিলিয়ে বলা যায় মানুষের সার্বিক সংকটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে কম খাওয়ার কারণে অপুষ্টি বাড়ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনো কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। যেটা একান্ত জরুরি।