বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেটের ঋণ সহায়তা হিসেবে ৫০৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে এ অর্থ যোগ হয়েছে। এজন্য আবারও এক দিনের মধ্যেই কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের রিজার্ভ। আজ বুধবার রিজার্ভ বেড়ে ৩০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। বিষয়টা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে ৫০৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছি। এটা রিজার্ভে যোগ হয়েছে। যার ফলে রিজার্ভ বেড়ে ৩০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আরও কয়েকটা সংস্থা থেকে খুব শিগগিরই আমরা তাদের থেকে ঋণ সহায়তা পাবো। আশা করছি এসব সহায়তা এলে আগামী জুনের মধ্যে আমাদের রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারে উন্নতি হবে।
এর আগে, সোমবার (৭ মে) এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে মার্চ-এপ্রিল মাসের দায় হিসাবে ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধ নিষ্পত্তির পর রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৯৮০ কোটি ডলারে। তথ্য অনুযায়ী, আকুর বিল পরিশোধের পর সাত বছর পর রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে এসেছে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে রিজার্ভ।
আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। খারাপ অবস্থার কারণে গত অক্টোবরে আকু থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাকি দেশগুলো প্রতি দুই মাস অন্তর নিজেদের মধ্যকার দায় নিষ্পত্তি করে। গত মার্চে আকুতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির ১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ছিল ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন, মে-জুন সময়ে ছিল ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন এবং জুলাই-আগস্টে ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরখানেক ধরে রিজার্ভ কমার ধারায় রয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল শেষে রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য এর বড় অংশই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করার কারণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ৩ মে পর্যন্ত ব্যাংকের কাছে ১২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। মূলত সরকারি কেনাকাটা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি দায় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আমদানি কম থাকার পাশাপাশি উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে ২০২১ অর্থবছরে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
যদিও আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকৃত রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে। সেইসঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৮০ ডলারের নিচে থাকতে পারবে না।
যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদণ্ড অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ আরও ৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার কম হবে। সংস্থাটির হিসেবে বাংলাদেশের ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২ হাজার ৩৩৭ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২২ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। করোনার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামার মধ্যে ছিল। কিন্তু করোনার প্রভাব শুরু হলে বিশ্ববাজারে সুদহার অনেক কমে আসে। তখন বিশ্বের অনেক দেশ বিদেশি ঋণ কমালেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।
মূলত ২০২১ সালের মধ্যে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে এমন পথ বেছে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল। তবে করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেশিরভাগ দ্রব্যমূল্য বেড়েছে।
এরপর রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের জুন শেষে ৪১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। গত এক বছরে ১৩ বিলিয়নের বেশি কমে এ পর্যায়ে নেমে এসেছে।