দাম বাড়ার প্রতিযোগিতায় এবার আলু-পেঁয়াজ

চিনির দামের অস্থিরতার মধ্যে দাম বাড়ার প্রতিযোগিতায় এবার নাম লেখাল আলু ও পেঁয়াজ। গতকাল ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, আর দেশি ও আমদানি পেঁয়াজ প্রতি কেজি গড়ে ৬০ টাকায়। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় আলু ও পেঁয়াজের দাম ৮০ শতাংশ বেড়েছে।

এ নিয়ে দোকানিরা সঠিক কোনো ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন ভালো হলেও কৃষক সঠিক দাম না পাওয়ায় সংরক্ষণের অভাবে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন মৌসুমের শেষের দিকে (মার্চ-এপ্রিলে) গরম আবহাওয়া ও পানির অভাবে পেঁয়াজের আকারও ছোট হয়েছে। তাই কাঙ্ক্ষিত ফসল পাননি কৃষকরা। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতে পেঁয়াজের বাম্পার ফল হলেও সে তুলনায় বাংলাদেশে আমদানি কম। ফলে চলতি বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নীতিনির্ধারণী মহলে আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, কোল্ড স্টোরেজ সমিতির তথ্য বলছে, গেল কয়েক বছর লোকসান হওয়ায় চলতি মৌসুমে আলুর চাষ কমিয়েছেন কৃষকরা। এ জন্য বেশি দামে আলু কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি সংরক্ষণ ব্যয়ও বেড়েছে এ বছর। এর প্রভাবে বাজারে আলুর সরবরাহ কমার সঙ্গে বাড়ছে দাম। তবে বর্ষা মৌসুমে মুন্সীগঞ্জ এলাকায় কৃষকের ঘরে থাকা আলু বাজারে এলে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, ঈদ-পরবর্তী টালমাটাল নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশন কাজ করছে বলে জানা গেছে।

গতকাল ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, যা গেল সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর গত মাসে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। গত বছর এ সময় বিক্রি হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা দরে। বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮১ শতাংশেরও বেশি। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সভাপতি হাজি মো. সাইদ বলেন, আবহাওয়া ও দামের কারণে লোকসান হয়েছে কৃষকের। গরম আবহাওয়ায় জমিতে পানির অভাবে পেঁয়াজের আকারও ছোট হয়েছে।

সমিতির সহসভাপতি মো. মাজেদ বলেন, উৎপাদন মৌসুম শেষে এখন সংরক্ষণ জটিলতায় বেশকিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এমন খবরে বাজারে দাম বাড়ছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণায় সংশ্লিষ্টরা আমাদের দাম স্থিতিশীল রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। দাম পাইকারি বাজারের ওপর নির্ভর করে না। আমদানি (স্থানীয়) কমলে বাজার বাড়বে, এটা স্বাভাবিক। আর সংকট হলে প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি সহজ হলে বাজার পড়ে (কমবে) যাবে।

অন্যদিকে, আলুর বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম সদস্য ও এফবিসিসিআইর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ বলেন, এ বছর মার্কেটে আলু কম। কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসায়ীরা বেশি দামে আলু কিনেছেন। এবার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আলু উৎপাদন কিছুটা কম হতে পারে। এর মানে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হবে, তা কিন্তু নয়।

মুনতাকিম আশরাফ বলেন, আগাম চাষের আলু ইতোমধ্যে বাজারে এসে গেছে। এর অধিকাংশ ভোগ হয়ে গেছে। এ ছাড়া কুমিল্লা ও মুন্সীগঞ্জ অঞ্চলের কৃষকরা আলুতে লোকসান দিয়ে এ বছর শাকসবজি বেশি উৎপাদন করেছেন। কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল থেকে আলু সংগ্রহ করছেন।

Scroll to Top