পিয়াজে এত ঝাঁজ!

বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে পিয়াজের দাম। পর্যাপ্ত মজুত সত্ত্বেও বাড়তির দিকে পণ্যটির দাম। এক মাসের ব্যবধানে দেশি ও আমদানি করা পিয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। কেজিতে বেড়েছে ২০-৪০ টাকা। এখন এক কেজি পিয়াজ কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকার ওপরে। অন্যদিকে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৫০ শতাংশ।  গত বছর অক্টোবর মাসে পিয়াজের কেজি ছিল ২০-৩০ টাকা। সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পিয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে । আগে ভারত থেকে যে দামে পিয়াজ আমদানি করা যেত, এখন সেই পিয়াজ আমদানি করতে প্রায় দ্বিগুণ খরচ পড়ছে। ফলে আমদানি করা পিয়াজের দাম বেড়েছে। আর আমদানি করা পিয়াজের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে দেশি পিয়াজের ওপর।
ভোক্তারা বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য দেশি পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনদিনের টানা বৃষ্টি তাদের দাম বাড়ানোর পথ সুগম করে দিয়েছে বলে জানান তারা।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টিতে নতুন পিয়াজ ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আর কৃষকের হাতে বর্তমানে কোনো পিয়াজ নেই। মূলত আমদানি করা পিয়াজের দাম বাড়ার কারণে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বড় ব্যবসায়ীরা দেশি পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাজারে দু-তিন সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন প্রতি কেজি পিয়াজ ৮০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৮-৬২ টাকায়, যা দু-তিন সপ্তাহ আগেও ছিল ৪৫-৫২ টাকার মধ্যে।

আমদানিকারকরা জানান, বাজারে দেশি, ভারতীয়, চীনা, তুরস্ক ও মিসরের পিয়াজ সরবরাহ রয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে দেশি পিয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫৫ টাকায়, চীনা ২৫-৩০, ভারতীয় ৪০-৪৫, তুরস্ক ৩৫-৩৬ ও মিসরের পিয়াজ ৩৬-৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি বাজারে এক পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। আর আমদানি করা এক পাল্লা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়।

আড়ৎদারদের মতে, আগস্টের শুরুতে টানা বৃষ্টির কারণে আড়তে পিয়াজ, রসুন ও আলু সংরক্ষণ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পিয়াজ ও কাঁচামরিচে।

রাজধানীর পিয়াজের পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের মেসার্স আজমিরী ভাণ্ডারের মালিক শাহীন বলেন, সম্প্রতি ভারতে দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব দেশের বাজারে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উৎসবের কারণে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পিয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। এ কারণে অনেক দিন ভারত থেকে পিয়াজ দেশে ঢুকতে পারেনি। তবে বর্তমানে পণ্যটির আমদানি বাড়ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পিয়াজের দাম কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা দরে। এর আগে গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে দিগুণ বেড়ে পিয়াজের দাম হয়েছিল ৬০ টাকা। তবে এর কিছুদিন পরে ১০ টাকা কমে ৫০ টাকায় নামলেও গত সপ্তাহে আবারো বিক্রি হয় ৬০ টাকা দরে। অর্থাৎ আগস্টের পর পিয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০-৫৫ টাকা। এছাড়া আমদানি করা ভারতীয় পিয়াজ গত সপ্তাহে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও বাজারে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা পিয়াজের দাম ছিল ৩৫-৫০ টাকা, যা বর্তমানে ৫৮-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ। এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজের দাম ছিল ৪৫-৫০ টাকা। এখন তা ৮০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪২.১১ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে পিয়াজের দাম বেড়েছে ১৫০ শতাংশ।

গত বছরের অক্টোবর মাসে আমদানি করা পিয়াজের কেজি ছিল ২০-২৮ টাকা। বর্তমানে ৫৮-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পিয়াজের দাম বেড়েছে ১০৫ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবর মাসে দেশি পিয়াজের কেজি ছিল ৩০-৩৬ টাকা।

বাংলাদেশ সময়:১২৩৫ ঘণ্টা, ২৮ অক্টোবর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি