খেজুরের দাম বাজারে বেড়ে গেছে। গত বছর পবিত্র রমজান মাসের আগে একই সময়ের চেয়ে কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের দাম আরো বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন।
এসব তথ্য আজ শনিবার (৪ মার্চ) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে খেজুর বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ফলের দোকানে খেজুরের বিভিন্ন জাতের মধ্যে বাপাশ ৩০০ টাকা, বরই খেজুর ৩০০ থেকে ৪০০, তিউনিসিয়ার খেজুর ৩৫০, আজোয়া ৬৫০ থেকে ১০০০, সৌদি মরিয়ম সুপরি ৬০০, ইরানি মরিয়ম ৮০০, কালমি ৬৫০ থেকে ৭০০ ও মাবরুম খেজুর ৮০০ থেকে ৯০০ টকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের ফুটপাতে মাবরুর মরিয়ম (সৌদি) ৭০০ টাকা, সৌদির কালমি ৬৫০, ইরানি মরিয়ম ৭৫০ থেকে ৮০০, মেরজুল ৬৫০ থেকে ১০৫০, সৌদির সুপরি ৫০০ থেকে ৬৫০, আজোয়া ৬৫০ থেকে ১০০০, বড়ই খেজুর ২৪০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারের ‘আল্লাহর দান’ ফল বিতানের কর্মী মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার খেজুরের এলসি কম। দেশে ডলার সংকট রয়েছে। এসব কারণে খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।’
মঞ্জুরুল আরো বলেন, ‘করোনার সময় সৌদিতে হজ হয়নি। ফলে সেখানে খেজুরের দাম কম ছিল কিন্তু এখন করোনা নেই, হজ হচ্ছে। সে কারণে সৌদিতেই খেজুরের দাম বেশি। এ কারণে দেশের বাজারেও খেজুরের দাম বেড়েছে।’
ফুটপাতের খেজুর বিক্রেতা বাবুল বলেন, ‘আমদানি যদি আরো কমে যায় তাহলে সামনে খেজুরের দাম আরো বেড়ে যাবে। যে দামে বিক্রি করছি ঘাটেও একই দাম। হুটহাট করে দাম বেড়ে যায়। এবার দামে স্থিরতা নেই। তবে এবার খেজুর ভালো।’
বিক্রেতাদের দাবি, করোনার আগে বর্তমানের দামেই খেজুর বিক্রি হতো। দাম কমেছিল শুধু করোনার সময়।
মহাখালীতে একটি ফলের দোকানে দেখা গেছে, আজোয়া খেজুর ৭০০ টাকা, ছড়া ৫০০ ও বরই খেজুর ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ফলের দোকানি রিটন বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার খেজুরের দাম দ্বিগুন। গত বছর আজোয়া ৪০০, কালমি খেজুর ৪০০, ছড়া ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি।’
আমদানিকারকরা এবার খেজুরের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বাড়তি কর ও ডলার সংকেটের কথা জানান।
কারওয়ান বাজারে খেজুর কিনতে আসা শহীদুল্লাহ শহীদ বলেন, ‘এবার খেজুরের দাম অনেক বেশি। গত বছরের চেয়ে কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি নিচ্ছে।’
মৌসুমি ইসলাম নামের আরেক গৃহিণী বলেন, ‘এবার মনে হয় খেজুর কম খেতে হবে। গত বছরের চেয়ে খেজুরের দামও বাজারে বেড়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ চলব কীভাবে?’
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসেবে, দেশে সারা বছরে খেজুরের চাহিদা এক লাখ টন। রমজানে ৫০ হাজার টন। কিন্তু এ বছর আমদানি বেশি কমেছে। গত তিন মাসে (নভেম্বর-জানুয়ারি) খেজুর আমদানি হয়েছে ২২ হাজার ৭০০ টন। গত বছর একই সময় আমদানি ছিল ৪০ হাজার ৮০০ টনের বেশি। অর্থাৎ এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে এ বছর আমদানি প্রায় ৪৫ শতাংশ কমেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ইরাক ছাড়াও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, জর্ডান ও মিসর থেকেও বাংলাদেশে খেজুর আসে। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ইরাকের জাহেদি খেজুর, যা বাংলা খেজুর নামের গ্রামগঞ্জে কেজি দরে বিক্রি হয়।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুরটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শামসুল বলেন, ‘বাংলাদেশে খেজুরের সবচেয়ে বড় চালান আসে ইরাক থেকে। এজন্য প্রায় এক মাস সময় লাগে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশ থেকেও আমদানি করা খেজুর চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ঢোকে দেশে। মিসরের অল্প কিছু খেজুর আসে বিমানে। রমজানের জন্য খেজুরের এলসি প্রায় শেষ করে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সার্বিকভাবে এ বছর খেজুর খুব কম আমদানি হচ্ছে।’