রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। সেই উত্তাপ এখন অনেকটাই কমে এসেছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ধীরে ধীরে বেশিরভাগ পণ্যের দাম পড়তে থাকলেও বাংলাদেশ হাঁটছে দামের চড়া পথে। দেশের বাজারে বাড়তি দাম তো কমেইনি, উল্টো কিছু কিছু পণ্যে দর বেড়েছে আগের চেয়ে আরও বেশি। এতে করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সংসারের চাকা ঘোরাতে খাবি খাচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য বলছে, টানা ১০ মাস বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমছে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতেও খাদ্যশস্যের দাম কমেছে। ২০২২ সালের মার্চের তুলনায় এখন খাদ্যশস্যের দাম ১৮ শতাংশ কম। ভোজ্যতেল, গম, চিনি, গুঁড়া দুধ, ডাল ও ছোলার দামে ঊর্ধ্বমুখিতা নেই। অথচ দেশের বাজারের চিত্র উল্টো।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল প্রায় এক হাজার ৯০০ ডলার। এখন তা এক হাজার ৩৫২ ডলারে নেমেছে। পাম অয়েলের দাম এক হাজার ৬৩৪ ডলার থেকে কমে হয়েছে ৯৪২ ডলার। একই সময়ের ব্যবধানে প্রতি টন গমের দাম ৪৯২ ডলার থেকে কমে ৩৮০ ডলার হয়েছে। এভাবে চিনি, গুঁড়া দুধ, ডাল ও ছোলার দামে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
এদিকে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ডলারের দাম বাড়ার কারণে কিছু খাতের ব্যবসা লোকসানে রয়েছে। এ ছাড়া কিছু সিন্ডিকেট ও মজুতদারের কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে এখন বিশ্ববাজারে দাম কমছে, ভোক্তারা এর সুফল পাবেন আরও দেড় থেকে দুই মাস পর।
তবে ব্যবসায়ীদের এসব বক্তব্যকে ‘অপকৌশল’ বলছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেই ব্যবসায়ীরা সঙ্গে সঙ্গে তা দেশের বাজারে সমন্বয় করেন। রাতারাতি সেটা কার্যকর হয়ে যায়। কিন্তু দাম কমলে নানান অজুহাত দেখান। এটা ব্যবসায়ীদের পুরোনো অপকৌশল।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধিটা যদি সঙ্গে সঙ্গে সমন্বয় হয়, কমতিটাও সেভাবেই কার্যকর করতে হবে। দাম বাড়লে তারা চিৎকার শুরু করেন, কমলে এমন ভাব করেন যে, কেউ সেটা জানে না, নিশ্চুপ হয়ে যান। এজন্য একটি কার্যকর আইনের কথা আমরা দীর্ঘদিন বলে আসছি। কিন্তু সেটা হয় না। সরকারের যেসব সংস্থা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অনুমতি দেয়, তারাও কমলে নিশ্চুপ থাকে। সবকিছুতে কঠিন মনিটরিং দরকার।’
এদিকে, দেশে রমজানে খেজুর, ছোলা, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়। এরমধ্যে পেঁয়াজ ও ডাল কিছু পরিমাণে বাংলাদেশে উৎপাদিত হলেও বাকি পণ্যগুলোর বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। বাজার পরিস্থিতি যাই হোক, এবারও রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মহল। কিন্তু রমজান শুরুর আগেই দ্রব্যমূল্যের আগাম ঊর্ধ্বগতির কারণে এমন আশ্বাসে ভরসা নেই জনগণের।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ কে এম আলী আহাদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববাজার পরিস্থিতির সঙ্গে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যসহ অন্য জিনিসপত্রের দাম সমন্বয় করার দায়িত্ব ট্যারিফ কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে তিন-চার দিন আগে বৈঠক হয়। বিশ্ববাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে তাদের ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা বিচার-বিশ্নেষণ করে দেশের বাজারে পণ্যের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হবে।