রোজায় চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে চিনির আমদানি শুল্ক কমছে

দেশে কয়েক মাস ধরে চিনির সংকট চলছে। ক্ষেত্রবিশেষে ভোক্তা ১২০ টাকা দিয়েও কিনতে পারেননি এক কেজি চিনি। এখনো পুরোপুরি কাটেনি সেই সংকট। উচ্চ দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি। এদিকে ঘনিয়ে আসছে রমজান। সাধারণত রমজান মাসে অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায় চিনির চাহিদা। তাই রমজানে চিনির চাহিদা মেটাতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আলাদা করে ডলারের মজুত রাখতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে চিনির দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমানোর চেষ্টা রয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে চিনির শুল্ক হার কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করেছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত্র টাস্কফোর্সের পঞ্চম সভায় আমদানি, সরবরাহ পরিস্থিতি ও বাজারমূল্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা হয়। ওই বৈঠকে চিনি আমদানি গত ছয় মাসে প্রায় ২ লাখ টন কম হয়েছে। মূলত ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারার কারণে এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে টাস্কফোর্সের সভায় উঠে আসে। এই পরিস্থিতিতে আসছে রোজায় চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক হার যৌক্তিকীকরণের জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে চিনির আমদানি এবং দাম স্থিতিশীল থাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের শুল্ক বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, টাস্কফোর্স কমিটির চিঠি নিয়ে কাজ চলছে। তবে এ মুহূর্তে সঠিক করে বলা যাচ্ছে না চিনির শুল্ক বাড়ানো বা কমানোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে চিনির চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন। চিনির প্রায় পুরো বাজার আমদানিনির্ভর। স্থানীয়ভাবে আঁখ থেকে চিনি আসে ৩০ হাজার টন। আর চিনির চাহিদা মেটাতে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয় ২০ থেকে ২২ লাখ টন। এই চিনি পরিশোধনের মাধ্যমে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান চিনি বাজারজাত করে থাকে। তবে অপরিশোধিত চিনি পরিশোধন করার সক্ষমতা রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টন। এসব কারণে রোজার দুই মাস আগেই চিনির বাজার-ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। এরই মধ্যে এলসি জটিলতা কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিত্যপণ্যের আমদানির জন্য ডলার সংরক্ষণ করে এলসি খোলার নির্দেশ দিয়েছে। আর শুল্ক কমানোর জন্য এনবিআরে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। টাস্কফোর্স কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে প্রতিটন চিনি আমদানিতে কাস্টম ডিউটি ৩ হাজার টাকা, রেগুলেটরি ডিউটি ৩০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অ্যাডভান্স ট্যাক্স ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে চিনি আমদানি ডিউটি পরে প্রায় ৬১ শতাংশ। আর দেশে উৎপাদিত চাহিদার তুলনায় নগণ্য হওয়ায় এই শুল্ক নিয়ে বিবেচনার জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করেছে টাস্কফোর্স কমিটি। এ ছাড়া ভেলুরুমের পরিবর্তে প্যাসিফিক ডিউটি করার অনুরোধও করা হয়েছে। যদিও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিল এনবিআর। মূলত রোজায় নিরবচ্ছিন্ন চিনির সরবরাহ এবং দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য এই অনুরোধ জানানো হয়েছে এনবিআরকে।