বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দেশে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য পরিষেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতকে অনুরোধ করব, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যতটা সাশ্রয়ী হওয়া যায়, সেটা করুন। বিলাসী পণ্য আমদানিও কমাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী যে জ্বালানি সংকট দেখা যাচ্ছে, আমরা মনে করি সেটা সাময়িক। খাদ্য সরবরাহ নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত রাসায়নিক সার নিয়ে এ ধরনের আরও কিছু হবে। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল ও এলএনজি সরবরাহ নিয়ে ভালো উদ্যোগ দেখতে পাব।
গতকাল শনিবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে ঔষধ খাতের রপ্তানি : কৌশল নির্ধারণ’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সালমান এফ রহমান পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ডলার মজুদ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য চাহিদার ওপর ভিত্তি করে এলসি মার্জিন বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডলারের যোগান বাড়াতে পারলে কোনো সংকটের আশঙ্কাই থাকে না। এর জন্য রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকের মতো অন্যান্য খাতে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না।
উপদেষ্টা বলেন, ওষুধ শিল্পে আমাদের অর্জন অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এবং দক্ষ মানব সম্পদের উপস্থিতির কারণে এ সাফল্য এসেছে। তিনি বলেন, এ শিল্পে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। তাই আমাদের আরও বেশি গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাপী বেশি হারে বায়োলজিক্যাল ড্রাগ উৎপাদনের প্রবণতা আগামীতে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের ব্যবহৃত মোট এপিআই’র ১৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। তবে আরও বেশি হারে মূল্য সংযোজনের নিশ্চিত করার বিষয়টি আমাদের জন্য খুব জরুরি।
সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধের প্রবেশাধিকারের বিষয়ে অত্যন্ত আশাবাদী এবং একবার এটা করা সম্ভব হলে ওষুধ শিল্পের বৈশ্বিক ইমেজ তৈরিতে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের ওষুধ রপ্তানি সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত জ্বালানি সংকট মেটাতে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য পরিসেবা ব্যবহারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাশ্রয়ী হচ্ছে। আমি অনুরোধ করব আপনারাও সমভাবে সাশ্রয়ী হন। তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কোথাও ব্যাহত হোক, সেটি কিন্তু আমরা চাই না। ভবিষ্যতে যেন কোনো সংকট তৈরি না হয়, সেজন্য এভাবে সতর্ক হতে হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, পোশাক রপ্তানিতে আমরা সক্ষমতা দেখিয়েছি এবং ওষুধসহ অন্যান্য খাতে এ সক্ষমতা বজায়ে রাখতে পারলে দেশের রপ্তানি উল্লেখজনক হারে বাড়বে। এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি খাতকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সেমিনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির জন্য ওষুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেটি অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৭ শতাংশ উৎপাদন করতে সক্ষম, যার মূল্য প্রায় ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৮৮ দশমিক মিলিয়ন ডলার এবং ওষুধ ও কেমিক্যাল খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৪১৯ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, যা মোট বিদেশি বিনিয়োগের প্রায় ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত অর্থবছর ওষুধ শিল্পখাতে প্রায় ১০৫০ মিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল আমদানি হয়েছে, এ অবস্থায় স্থানীয়ভাবে এপিআই উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরও মনোযোগী হতে হবে। তিনি মনে করেন, পেটেন্ট আইন এবং ওষুধ নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনের বাংলাদেশ ট্রিপস চুক্তি অনুসারে লাইসেন্সিং বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে ওষুধ শিল্প সুবিধা ভোগ করতে পারে।
সেমিনারে নির্ধারিত আলোচক ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. এবিএম ফারুক এবং ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মোসাদ্দেক হোসেন।