বাণিজ্য মেলায় প্রথম দিন দর্শনার্থী কম থাকলেও রাতের আলোকসজ্জা মুগ্ধ অনেককেই করেছে। বাণিজ্য মেলা এখন রাজধানীর আগারগাঁও থেকে পূর্বাচল। এই দূরত্ব খুব বেশি মনে হতো না যদি যানজট না থাকত, ভালো হতো রাস্তাঘাট ও যাতায়াত ব্যবস্থা। আর বাণিজ্য মেলায় আগত দর্শনার্থীদের যাতায়াতের এই কষ্টই সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে।
গতকাল শনিবার নতুন বছরের প্রথম দিন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) ২৬তম আসরের পর্দা উঠেছে পূর্বাচলে নবনির্মিত স্থায়ী কমপ্লেক্স বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে। মাসব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।
নতুন ভেন্যুতে কেমন হবে বাণিজ্য মেলা? আগারগাঁওয়ে যেমন জমজমাট মেলা হতো, পূর্বাচলেও কি সেরকম হবে—এতদিন তা নিয়েই ছিল জল্পনা-কল্পনা। গতকাল বাণিজ্য মেলার প্রথম দিন মেলায় আগত দর্শনার্থী ও মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও এ নিয়ে আলোচনার কমতি ছিল না। নতুন ভেন্যুতে মেলা নিয়ে যেমন তারা ভালোমন্দ দুই-ই জানিয়েছেন, তেমনি বলেছেন—যাতায়াতের কষ্টের কথা। মেলার প্রথম দিন ছুটির দিন থাকায় তরুণ দম্পতি রোকন মাহমুদ মেলায় এসেছেন মিরপুর থেকে। মেলা প্রাঙ্গণে তাদের সঙ্গে কথা হয়।
মেলা প্রসঙ্গে রোকন মাহমুদ বলেন, আগে আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলায় নিয়মিত যেতাম। নতুন জায়গায় মেলা কেমন হচ্ছে তা দেখার জন্যই মূলত আজ (শনিবার) এসেছি। তবে আসতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বরোড ফ্লাইওভার থেকে বেলা ৩টার দিকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বিআরটিসির বাসে উঠেছি। মাঝে রাস্তা ভাঙাচোরা ও যানজটে আধা ঘণ্টার রাস্তা লেগেছে প্রায় দেড় ঘণ্টার কাছাকাছি। এছাড়া প্রচণ্ড ধুলায় কাপড়চোপড় একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, যদি মেলা উপলক্ষ্যে রাস্তায় পানি ছিটানো হতো তাহলে খুব ভালো হতো। একই অভিযোগ জানিয়েছেন, মেলায় আগত বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী। আবার কয়েকজন দর্শনার্থী বিশ্বরোড ফ্লাইওভারের নিচে বিআরটিসির গাড়ি আসতে দেরি হওয়ায় মেলায় না গিয়ে ফিরে গেছেন। এ প্রসঙ্গে সেখানকার বিআরটিসির কাউন্টারের একজন টিকিট বিক্রেতা বলেন, বিআরটিসির গাড়িগুলো এখানে শেওরা এলাকায় রাখা হয়। সেখান থেকে গাড়ি আসতে দেরি হয়েছে। এছাড়া এখন তো দর্শনার্থী কম। দর্শনার্থী বাড়লে এই সমস্যা হবে না।
মেলা জমবে কবে:গতকাল মেলা ঘুরে দেখা গেছে, এখনো বেশির ভাগ স্টল প্যাভিলিয়নের অবকাঠামো নির্মাণই শেষ হয়নি। সবকিছুতেই একটা ঢিলেঢালা ভাব। এছাড়া আগাওগাঁওয়ে মেলা প্রাঙ্গণে যে জমজমাট ভাব থাকত এখানে তা নেই। এ নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ ঝাড়লেন মেলায় আসা জেসমিন আক্তাররা। তিনি এসেছেন উত্তরা থেকে। সঙ্গে তার বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধব রয়েছে। তিনি বলেন, যেভাবে ঢিলেঢালাভাবে কাজ চলছে তাতে স্টল বানাতেই সাত দিনের বেশি লেগে যাবে। মেলায় নাভানা ফার্নিচারের এক্সিকিউটিভ ওয়াকিল হাসান বলেন, মেলা তো মাত্র শুরু। প্রথম দিন। আশা করছি, সপ্তাহখানেকের মধ্যে মেলা জমে উঠবে। হাতিল ফার্নিচারের টেরিটোরি ইনচার্জ মোহাম্মদ রফি বলেন, আগারগাঁও বাণিজ্য মেলায় আমাদের দোতলা প্যাভিলিয়ন করা হতো। কিন্তু এখানে জায়গা ছোট হওয়ায় সে সুযোগ নেই। তারপরও মেলার প্রথম দিন অনেক দর্শনার্থী তাদের স্টলে এসেছেন জানিয়ে বলেন, মেলা তো মাসব্যাপী। তাই আশা করছি, সামনে মেলা জমবে। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখন অনেকটা স্বাভাবিক হলেও ইউরোপসহ অন্যান্য কিছু দেশে তা আবার নতুন রূপে ছড়িয়ে পড়ায় এবারের বাণিজ্য মেলায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ কিছুটা কম। এদিকে গতকাল যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে তা হলো মেলায় আগত অধিকাংশ দর্শনার্থীর মুখে মাস্ক ছিল না। করোনা মহামারি এ সময়ে যখন আবার সংক্রমণ বাড়ছে তখন মাস্ক না পরার এ বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
তথ্য নেই ইপিবির তথ্যকেন্দ্রে:গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেউ সেখানে নেই। তবে একজনকে পাওয়া গেলেও তিনি জানান, মেলা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোন তথ্য নেই। উল্লেখ্য, দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উত্পাদনে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল হতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল ও ১৫টি ফুড স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত:মাসব্যাপী এই বাণিজ্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে খোলা থাকবে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। মেলার প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকা ও শিশুদের ২০ টাকা। এছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভার থেকে মেলা প্রাঙ্গণে যাতায়াতের জন্য ৩০টি বিআরটিসির বাস চলবে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। ইপিবি জানিয়েছে, দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়লে বাসের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।