এবারের পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে কোরবানিযোগ্য প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি গবাদিপশু প্রস্তুত ছিল। তবে দেশে এবারে কোরবানি হয়েছে মোট ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু। এ বছর গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা যায়, এবারে প্রস্তুত রাখা ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি গবাদি পশুর মধ্যে গরু ও মহিষ ছিল ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার এবং ছাগল ও ভেড়া ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার। কোরবানি কম হওয়ার কারণে প্রায় ২৮ লাখ ২৩ হাজার পশু বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রায় ২৪ শতাংশ বা প্রায় এক-চতুর্থাংশ পশু এবারের কোরবানিতে অবিক্রীত রয়ে গেছে। আর কোরবানির পরিমাণ গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
দেশে ২০১৬ সালে প্রায় ১ কোটি ৪ লাখ পশু কোরবানি হয়, যা ২০১৭ সালে ছিল ১ কোটি ৫ লাখ, ২০১৮ সালে ১ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার, ২০১৯ সালে ১ কোটি ৬ লাখ আর ২০২০ সালে ৯৪ লাখ ৫০ হাজার। ২০২১ সালে তা ৯০ লাখ ৯৩ হাজারে নেমে এসেছে। ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে পশু কোরবানি কমেছে প্রায় ৩ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি।
অর্থনৈতিক অসংগতির কারণে চলমান মহামারীতে কোরবানির পশুর চাহিদা কমে যাওয়া, গ্রাম থেকে শহরে পশু আসতে প্রতিবন্ধকতাসহ নানা কারণেই কোরবানিতে পশু বেচা-কেনা কম হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় জটিলতা, খামারিদের পশু বাজারে নিয়ে আসতে না পারা, বড় শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে পাইকারি ব্যবসায়ী কম যাওয়া, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়াসহ নানা কারণে বিপণন ব্যবস্থায় এবারে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান বলেন, কোরবানিতে যে পরিমাণ পশু প্রস্তুত ছিল তার প্রায় এক-চতুর্থাংশ পশু বেচা-কেনা করতে পারেনি খামারি ও ব্যবসায়ীরা। তবে খামারিদের তুলনায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন। কোরবানির আগের দিনও অনেক কম দামে পশু বিক্রি করেছেন তারা। কোরবানির পরের দুইদিনেও রাজধানীর পশুর হাটে অনেক পশু দেখা গেছে। খামারিদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে। তাদের সহযোগিতার মাধ্যমে দেশে পশু উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতার ধারা অব্যাহত রাখা হবে।
জানা গেছে, সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সরকার এ বছর অনলাইন প্লাটফর্মে গবাদি পশু ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম গ্রহণ করে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা কাজে লাগিয়ে গবাদি পশুর ডিজিটাল হাট পরিচালনা করে, যার কারণে অনলাইনে মোট ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৯টি গবাদি পশু বিক্রয় হয়েছে। এর আর্থিক মূল্য ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার ৬৭৮ টাকা। ২০২০ সালে অনলাইনে পশু বিক্রি হয়েছিল ৮৬ হাজার ৮৭৪টি, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৫৯৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪ হাজার ৮২৯ টাকা। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রায় পাঁচ গুণ বেশি গবাদি পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবারে অনলাইনে বিক্রি বাড়ার কারণে আগামী বছর অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়ের পরিসর আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে একটি বড় প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে কাজ করবে। করোনা মহামারীর মধ্যেও গবাদি পশু উৎপাদন প্রস্তুত করতে খামারিদের পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান, উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রস্তুত করা কোরবানির পশু বাজারে আনতে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া, অনলাইনে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা, পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল সেবা প্রদানসহ সুষ্ঠুভাবে কোরবানির জন্য সার্বিক সব ধরনের ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে।