চা শিল্পাঞ্চল বেষ্টিত জনপদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটে গত মে মাসে ৬০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আলাদা দু’টি আবহাওয়া অফিস থেকে এই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়।
যার মোট যোগফল দাঁড়ায় ৬০১ মিলিমিটার।
সিলেট আবহাওয়া অফিস এবং শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে পুরো মে মাসজুড়ে রেকর্ড করা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথাক্রমে ৩৬৫ মিলিমিটার এবং ২৩৬ মিলিমিটার। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২২ দিন আর শ্রীমঙ্গলে ১৫ দিন। তুলনামূলক বিবেচনায় শ্রীমঙ্গলের বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে সিলেটে বেড়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়া সহকারী ওমর তালুকদার বলেন, মে মাসের ২২ দিন সিলেট ও সিলেট শহরতলীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৬৫ মিলিমিটার। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় ৩১ মে, ১৮ মে এবং ১৪ মে। যার পরিসংখ্যান যথাক্রমে ৭৫ মিলিমিটার, ৪৫ মিলিমিটার এবং ৪২ মিলিমিটার। এই তিনদিনের সংখ্যাই সিলেটে মে মাসের সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
অপরদিকে শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, পুরো মে মাসের মধ্যে মাত্র ১৫ দিন শ্রীমঙ্গলে ২৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছি। তিনদিনের অধিক বৃষ্টিপাত হয়েছে যথাক্রমে ৫ মে ৫১ মিলিমিটার, ১৪ মে ৩১ মিলিমিটার এবং ৩ মে ৩১ মিলিমিটার। এগুলোর প্রতিটিই গত ২৪ ঘণ্টার রেকর্ড করা ফলাফল।
বাংলাদেশ চা সংসদ (বিটিএ) সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং অভিজ্ঞ টি-প্ল্যান্টার জিএম শিবলি বলেন, এবছর তো খরায় পড়ছে চা শিল্প। বৃষ্টিপাতের ধারাবহিকতা যদি বজায় না থাকে তাহলে এই বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য সুফল আসে না। খরা ও অতিবৃষ্টি দুটোই চায়ের জন্য হুমকি। এ বছরের শুরুটা হয়েছে খরা দিয়ে। পরবর্তী মাসগুলোতেও ধারাবাহিক বৃষ্টি হয় তবেই দারুণ ফলাফল আসবে চায়ের মোট উৎপাদনে। শুধু মে মাসের বৃষ্টিপাত হলেই হবে না।
জিএম শিবলি আরো বলেন, আমাদের চা বাগানের রেকর্ড অনুয়ারি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১ দশমিক ৫৪ ইঞ্চি, মার্চে ১ দশমিক ১৭ ইঞ্চি, এপ্রিল মাসে ৩ দশমিক ৮৩ ইঞ্চি এবং মে মাসে ১২ দশমিক ৬৯ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর চলতি বছর অর্থাৎ, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি বৃষ্টিপাত নেই, মার্চে ১ দশমিক ৫৪ ইঞ্চি, এপ্রিলে শূন্য দশমিক ৮৮ ইঞ্চি এবং মে মাসে ৭ দশমিক ৬৯ ইঞ্চি। লক্ষ্য করে দেখুন, ২০১৯ সালে মে মাসের বৃষ্টি ১২ দশমিক ৬৯ ইঞ্চি, আর ২০২১ সালের মে মাসে ৭ দশমিক ৬৯ ইঞ্চি অর্থাৎ ৫ ইঞ্চি কম। তাহলে কীভাবে হবে?
২০২০ সালে কোভিড পরিস্থিতির কারণে বছর বিবেচনায় চা শিল্পে সক্ষমতা বাড়লেও বছরের প্রথম ৫-৬ মাসে চায়ের উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হয়েছিল বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, দেশের ১৬৭টি চা বাগানে ২০২০ সালে মোট উৎপাদন হয়েছে ৮৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন কেজি চা (৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার কেজি চা)। তবে কোভিড সংক্রমণের বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন কেজি।
আর ২০১৯ সালে চা উৎপাদন হয়েছিল ৯৬ দশমিক ০৭ মিলিয়ন কেজি (৯ কোটি ৬০ লক্ষর কিছু বেশি)। যা দেশের চা শিল্পের ১৬৭ বছরের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের মাধ্যমে নতুন রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। সে বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭৬ মিলিয়ন কেজি চা (৭ কোটি ৬০ লাখ)।