জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর বাইরে জেলায় জেলায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় নিশ্চিত করতে অভিযান শুরু করেছে বোর্ডের আওতাধীন ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে রাজধানীর অদূরে নরসিংদী জেলার ব্যস্ততম দুটি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে ২৩৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। তাতে কারো ভ্যাট নিবন্ধন পাওয়া যায়নি। শিগিগরই আরো কয়েকটি জেলায় এ জরিপকাজ চালানো হবে। এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে কৌশল নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে এনবিআরে পাঠানো হবে।
সূত্র মতে, গত কয়েক বছর ধরে ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের তদারকির ফলে রাজধানীতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা হলেও এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। ফলে অপেক্ষাকৃত বড় বড় মার্কেট ও শপিং মলে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে একটি বড় সংখ্যক প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে ভ্যাটের রিটার্নও জমা দিচ্ছে। প্রত্যাশিত না হলেও এসব প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে ভ্যাটের নিয়ম পরিপালনে এগিয়ে আসছে। কিন্তু রাজধানীর বাইরে জেলা শহরে বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা নিবন্ধন নিচ্ছে না।
স্থানীয় ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের ঘরে ভ্যাটের টাকা না দিয়েই ব্যবসা চালিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সমিতিও থাকছে সহযোগীর ভূমিকায়।
ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা নরসিংদীর ব্যস্ততম দুটি মার্কেট ইনডেক্স প্লাজা ও জামান শপিং কমপ্লেক্সের ২৩৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছেন, একটি মাত্র দোকান পাওয়া গেছে, যার ভ্যাট নিবন্ধন রয়েছে। ঐ প্রতিষ্ঠানও গত ১০ মাস ধরে ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয় না। অর্থাত্ ২৩৭টি দোকানের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই সরকার কোনো ধরনের ভ্যাট পায় না।
সূত্র জানায়, নরসিংদীর ইনডেক্স প্লাজা ও জামান শপিং কমপ্লেক্স নামে আলোচ্য দুটি শপিং কমপ্লেক্সে তৈরি পোশাক, পাদুকা, জুয়েলারি, স্টেশনারিজ, ইলেক্ট্রনিক্স, ডিপার্টমেন্টালসহ অন্যান্য বিপনীবিতান রয়েছে। ভ্যাট আইন অনুসারে এদের প্রত্যেকের ওপর বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য।
ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, নরসিংদীর বাইরে অন্যান্য জেলায়ও একইভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট প্রদানের বিষয়টি জরিপ করে দেশব্যাপী ভ্যাট পরিস্থিতির একটি চিত্র বের করার চেষ্টা করবে। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, \”নরসিংদীর মতো জেলায় এ পরিস্থিতি হলে অন্যদের অবস্থা আরো খারাপ হবে। এটি বড় ধরনের অনিয়ম। ভ্যাট নিবন্ধনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নিবন্ধন না নিয়ে কীভাবে ব্যবসা চালায়? এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মার্কেট সমিতির দায় রয়েছে। স্থানীয় ভ্যাট অফিসের যারা দায়িত্বশীল, তাদেরও তদারকির বিষয় রয়েছে।\”
তিনি বলেন, \”আমরা কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব না। কোথায় গ্যাপ রয়েছে এবং কী করলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধন তথা ভ্যাটের আওতায় আনা যাবে, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে এনবিআরের নজরে নিয়ে আসব—যাতে এনবিআর কর্মকৌশল ঠিক করতে পারে। এছাড়া যাদের অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিষয়টি স্ব স্ব কমিশনারেটে পাঠাব।\” তিনি বলেন, \”আমাদের পক্ষে হয়তো সব মার্কেট যাচাই করা সম্ভব হবে না। দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলার মার্কেটে জরিপ করে একটি চিত্র পাওয়ার চেষ্টা করব।\”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে অর্থনৈতিক ইউনিট রয়েছে ৭৮ লাখ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এর মধ্যে ১০ লাখের মতো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন থাকা উচিত। অর্থাত্ এসব প্রতিষ্ঠান ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে তার সঠিক হিসাব এনবিআরের কাছে দেওয়ার কথা। কিন্তু এনবিআরের হিসাবে, এখন পর্যন্ত ভ্যাট নিবন্ধধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পৌনে ২ লাখের মতো। এর মধ্যে আবার একটি বড়সংখ্যক প্রতিষ্ঠান রিটার্ন জমা দেয় না।