রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্মশালা করেছে। কর্মশালায় ১১৩টি সুপারিশ এসেছে। সুপারিশের অন্যতম হচ্ছে একীভূতকরণ। সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে এক দফা বৈঠকও করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। শিগগির আবার পর্যালোচনা বৈঠক করে এসব সুপারিশ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্য সারসংক্ষেপ চূড়ান্ত করবে। অর্থমন্ত্রী দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরলেই তার কাছে সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হবে। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। খবর অর্থ বিভাগ সূত্রের।
সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় খাতের কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের সুপারিশ এসেছে। অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, এটি একটি বড় ধরনের সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। যদিও অর্থমন্ত্রী কর্মশালায় বলেছিলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এগোনোর পথে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামীতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই একীভূত করা হবে। এ জন্য তিনি বেশ কিছু দিকনির্দেশনাও দেন। জানা গেছে, এসব মতামত পর্যালোচনায় এক দফা বৈঠক করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আরেক দফা বৈঠক করেই অর্থমন্ত্রীর জন্য চূড়ান্ত সারসংক্ষেপ তৈরি করা হবে।
ব্যাংক একীভূত করার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে আগামী এক বছরের মধ্যে যেন একীভূতকরণের একটি আইনের কাঠামো দাঁড় করানো হয়। এরপরই সরকারি ব্যাংকের একীভূতকরণের কাজ শুরু করা হতে পারে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলী গতকাল বলেন, সরকারি ব্যাংকের মালিক সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন ও নীতি অনুসারে একীভূত করায় আইনি কোনো বাধা নেই। তবে একীভূত হলেও এসব ব্যাংকের সমস্যা সমাধান হবে না। ব্যাংকগুলোর সমস্যা নন-পারফরমিং লোন এবং ঋণ দিলে ঋণ আদায় হয় না। এ জন্য সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দিতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বাদে অন্য কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে। একীভূতকরণের জন্য প্রাথমিকভাবে চারটি ব্যাংকের কথা বলা হয়। এই ব্যাংকগুলো হলো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। বলা হয়, এই ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়। পৃথকভাবে পরিচালিত হওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর লোকসানের পরিমাণ ক্রমেই বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ মোট বিতরণ করা ঋণের ১০-১১ ভাগ। কিন্তু সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বিতরণ করা ঋণের ২৭ শতাংশ। ঋণ দেওয়ার সময়ই ব্যাংকগুলো মন্দঋণ তৈরি করে। ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়ত এ দুরবস্থায় পড়ে যাচ্ছে। এ জায়গা থেকে উত্তরণে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন বলেও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ। ফলে একীভূত করা হলেই যে ব্যাংকের চেহারা রাতারাতি পাল্টে যাবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অসুস্থ ২-৩টি ব্যাংককে একীভূত করলে সমস্যার সমাধান হবে না। তবে যেসব অসুবিধা আছে তা সমাধান করে একীভূত করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে আমার সময়ে এ বিষয়ে একটি নীতিমালাও করা হয়েছে। সেটি অনুসরণ করা যেতে পারে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে আমরা ১১৩টির মতো সুপারিশ পেয়েছি। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তার মতে, সোনালী ব্যাংকে ১ হাজার ২১৩টি শাখা পরিচালনায় সমস্যা নেই। সেখানে বিডিবিএলের ৪২টি এবং বেসিক ব্যাংকের ৬৮টি শাখার জন্য আলাদা এমডি, ডিএমডির প্রয়োজনীয়তা নেই। এ জন্য একীভূত করা গেলে ভালো হয়। তবে এ ক্ষেত্রে দুই ব্যাংকের জনবল, মূলধন কীভাবে একীভূত করা হবে সে বিষয়ে নীতিমালার প্রয়োজন।
অন্যদিকে ৭২ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা মনে করেন বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ব্যাংক রয়েছে তা কমাতে হবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণার জরিপে অংশ নেওয়া ব্যাংকারদের মধ্যে ৭২ শতাংশ ব্যাংকের সংখ্যা কমানোর পরে মত দিলেও ১১ শতাংশ মনে করেন ব্যাংকের বর্তমান সংখ্যা ঠিক আছে। মন্তব্য করতে রাজি হননি ১৭ শতাংশ ব্যাংকার। সূত্র- আমাদের সময়।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, ১৯ অক্টোবর ২০১৭