ধুলাবালির শহর রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে থাকা চারটি নদীর তীরভূমিতে ওয়াকওয়েসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধন ও নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই কাজের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে আরও ১ হাজার ৩২ কোটি টাকার বাড়তি আবদার করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)।
তবে জানা গেছে, বিআউডাব্লিটিএর প্রস্তাবে পুরোপুরি সাড়া না দিয়ে ৩৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বাড়তি অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রাথমিকভাবে নদীতীর ঘিরে ৫০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের সঙ্গে নির্মিত হবে ইকোপার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, বসার বেঞ্চ, ফুডকোর্ট ও প্রয়োজনীয় টয়লেট। পাশাপাশি সবুজায়নে বৃক্ষরোপন ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্পে মাটি খনন কাজ ১৩ লাখ ২১ হাজার ৫৮৩ ঘনমিটার বৃদ্ধি, নদীর তীরভূমিতে ওয়াকওয়ে ২৩ দশমিক ৫৮৫ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া নদীর তীরভূমিতে কলামের ওপর ওয়াকওয়ে ১১ দশমিক ৮৩০ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নানা কারণে ধাপে ধাপে বাড়ছে ‘ঢাকার চারপাশে সার্কুলার নৌ-রুট এবং সড়ক’ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি ব্যয় ও সময়।
সূত্র জানায়, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরভূমি সংরক্ষণ ও নৌপথ রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২২ মেয়াদে একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন নাগাদ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে। প্রকল্পটিতে নতুন কিছু খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম পার্কিং ইয়ার্ড নির্মাণ, যাত্রী ছাউনি, বিশেষ ধরনের আরসিসি সিঁড়ি।
প্রকল্পের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। বিআইডব্লিউটিয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করে পরিকল্পনা কমিশন। সভায় প্রকল্পের ওপর পুনরায় পিইসি সভা অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য কতিপয় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১৮১ কোটি ১০ লাখ টাকার সিদ্ধান্ত নেয় পরিকল্পনা কমিশন।
ব্যয় কমানো প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে। এটা ভালো প্রকল্প। ওয়াকওয়ে করবে কিছু বিনোদন কেন্দ্রও হবে। ঢাকার লোক জনের জন্য খুবই দরকারি। নদীর পাড় দিয়ে হাঁটলে মন ভালো থাকবে। তবে প্রথমে বিআইডাব্লিটিএ যে ব্যয় চেয়েছিল তা কমানো হয়েছে। আমরা সবকিছু ঠিকমতো মতো চেক করে দেখেছি। আমরা ব্যয় কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। সামনে একনেক সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে।
সূত্র জানায়, সংশোধিত প্রকল্পে ১৮ লাখ ২১ হাজার ঘন মিটার নদীর ভরাটকৃত মাটি খনন ও অপসারণ, ৩৩ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার নদীর তীরভূমিতে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ১৭ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার নদীর তীরভূমিতে কলামের ওপর ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ২৪ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার তীররক্ষা কাজ, ৮০টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ, ১০ দশমিক ০৪ কিলোমিটার ওয়াল নির্মাণ, ২৯১টি বসার বেঞ্চ নির্মাণ, ৮৫০ মিটিরা সীমানা প্রাচীর, নতুন অঙ্গ হিসেবে ৪টি ঘাট, ৩৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে সংলগ্ন ড্রেন নির্মাণ করা হবে। ২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার বোল্ডার প্রটেকশন, ২১ হাজার বর্গ মিটার পার্কিং ইয়ার্ড নির্মাণ, সাড়ে ৩ কিলোমিটার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ১৪টি জেটি এবং ২৮টি স্পড নির্মাণ, ৩ হাজার ৮৫০টি সীমানা পিলার, ১টি মোটরযান ৩টি ইকোপার্ক নির্মাণ ইত্যাদিসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে তীররক্ষা কাজ ২০ কিলোমিটার কমেছে। এছাড়া রেলিং নির্মাণ কাজ ৬ দশমিক ৩৯০ কিলোমিটার কমেছে।
ইতোমধ্যেই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে ওয়াকওয়ের রুট চূড়ান্ত হয়েছে। রুটটি হবে আব্দুল্লাহপুর থেকে ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী-রায়েরবাজার-বাবুবাজার- সদরঘাট-ফতুল্লা-চাষাড়া- সাইনবোর্ড-শিমরাইল-পূর্বাচল সড়ক হয়ে তেরমুখ পর্যন্ত।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ সমন্বিতভাবে এ কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের এক কোটি জনগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হবেন। ঘনবসতিপূর্ণ নগরীর নাগরিকরা স্বস্তি খুঁজে পাবেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা) রফিক আহম্মদ সিদ্দিক বলেন, প্রকল্পের আওতায় নতুন কিছু কাজ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। তবে প্রথমে আমরা যে ব্যয়ের প্রস্তাব করেছিলাম তা কমানো হয়েছে। পিইসি সভায় যে ব্যয় কমানো হয়েছে এটা যৌক্তিক বলে মনে করি।
প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোভিডের কারণে প্রকল্পের কাজের ধীরগতি হয়েছে। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারবো।