বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন কম হওয়ার কারণে ২০২১ সালে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৩ শতাংশের বেশি কমিয়ে ৮২০ বিলিয়ন টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৪৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে কমানোর বিষয়টি ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।
তারা আরও বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নিলাম পঞ্জিকার ফেব্রুয়ারি মাসে সামঞ্জস্য করা হয়েছে।
সরকারের ঋণ পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনা করে মার্চ-এপ্রিল মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ আরও কমতে পারে। ’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন কম হয়েছে এবং সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হয়েছে। এ কারণে চলতি অর্থবছরের সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হয়েছে। ’
সরকারের বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে মহামারির মধ্যে এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
অপরদিকে, লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রি সরকারের প্রকৃত ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি এক লাফে বেড়ে ২৭৭ দশমিক ০৭ শতাংশ ২০৪ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ট্রেজারি বিল (টি-বিল) এবং বন্ড ইস্যু করে ঋণ নেওয়াও সরকারকে কাটছাঁট করতে হয়েছে।
চলতি বছরের ২ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার ২১০ বিলিয়ন টাকা ঋণ নেওয়ার পরে প্রায় ১৯০ বিলিয়ন টাকা হিসাবে অতিরিক্ত ছিল।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা নিলাম পঞ্জিকা অনুসারে বাজেটের ঘাটতি মোকাবিলায় ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ বিলিয়ন টাকার বেশি।
একই মাসে সরকার টি-বিলস ও বন্ড ইস্যু করে ব্যাংকখাত থেকে ১৪০ বিলিয়ন টাকা ঋণ নিতে পারে।
ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি নিরাপত্তার (গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ) মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন টাকা বাদ দেওয়ার পরেও প্রকৃত ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন টাকা।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের বাজেট ব্যয় বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে আরও জোর দেওয়া উচিত, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে সহায়তা করবে। ’
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বিপুল অংকের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের প্রকৃত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৪৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪৭৩ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন টাকা বেশি।
বর্তমানে তিনটি টি-বিলস নিলাম লেনদেনের মাধ্যমে সরকারের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ঋণ সমন্বয় করা হয়। এগুলো হলো— ৯০ দিন মেয়াদী টি-বিলস, ১৮০ দিন মেয়াদী টি-বিল ও ৩৬৫ দিন মেয়াদী টি-বিলস। এছাড়াও, ০২, ০৫, ১০, ১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদী বন্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়।