যে দুটি স্তম্ভের ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে তার অন্যতম রেমিট্যান্স। আর এই রেমিট্যান্সের সিংহভাগ আসে অভিবাসী শ্রমিকদের মাধ্যমে। এই বিবেচনায় সরকার, ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা দেশে-বিদেশে তাদের সঠিক মর্যাদা প্রদানের পাশাপাশি তাদের জন্য আইনি সহায়তা ও বিদেশে শ্রমিক প্রেরণে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) উদ্যোগে গতকাল আয়োজিত ‘অভিবাসন এবং অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর কভিড-১৯-এর প্রভাব: পুনরেকত্রীকরণ এবং কাজে নিরাপদ প্রত্যাবর্তন (দেশে ও বিদেশে)’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন-জীবিকার ওপর কভিড-১৯-এর প্রভাব পর্যালোচনা; কভিড-১৯-এর কারণে অভিবাসী শ্রমিকের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব; অভিবাসী শ্রমিকদের জীবন ও কাজের নিরাপত্তা (দেশে ও বিদেশে); বিদেশ ফেরত অভিবাসী শ্রমিকদের পুনরেকত্রীকরণে চলমান কার্যক্রমগুলো পর্যালোচনা; কভিড-১৯-এর কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সহায়তা এবং করণীয় নির্ধারণে প্রণীত নীতিগুলোর ঘাটতি বিশ্লেষণ; অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতকরণে করণীয় নির্ধারণ এবং অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য নতুন শ্রমবাজার তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান সিরাজের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব নজরুল ইসলাম খানের সঞ্চালনায় আয়োজিত ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম হেড শরীফুল ইসলাম হাসান। প্রধান আলোচক ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শহীদুল আলম (এনডিসি)। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের যুগ্ম সচিব, পরিচালক (তথ্যপ্রযুক্তি, গবেষণা ও পরিকল্পনা) নুরুন আখতার, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেশন মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) নির্বাহী পরিচালক ড. সিআর আবরার, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম- এসএনএফের আহ্বায়ক ড. হামিদা হোসেন, বিলস যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক রিনা রায়, আইওএম বাংলাদেশের মাইগ্রেশন গভর্ন্যান্স হেড শাহরীন মুনির, আইএলও সাউথ এশিয়ার ডিসেন্ট ওয়ার্ক টেকনিকেল টিমের ওয়ার্কার্স অ্যাক্টিভিটিস স্পেশালিস্ট সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, আইএলও ঢাকার মাইগ্রেশন প্রজেক্ট চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার লেটেশিয়া ওয়েবেল রবার্টস প্রমুখ। এছাড়া মানিকগঞ্জের দুজন বিদেশ ফেরত শ্রমিক রাশিদা বেগম ও আইয়ুব আলী তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
মূল বক্তব্যে শরীফুল হাসান বলেন, বাংলাদেশী প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ শ্রমিক বিশ্বের ৮৪টি দেশে কাজ করছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতি আজকের অবস্থানে। কিন্তু অভিবাসী শ্রমিকরা দেশে-বিদেশে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসছেন। কভিড-১৯ সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছেন। এছাড়া একই সময়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক বিদেশ যেতে পারেননি। ফেরত আসা শ্রমিকরা দেশে এসে প্রয়োজনীয় লিগ্যাল সাপোর্ট পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যত শ্রমিক বিদেশ যাচ্ছেন তার প্রায় অর্ধেক অদক্ষ। ফলে শ্রমিকরা বিদেশ গিয়ে নির্ধারিত কাজ এবং প্রাপ্ত মজুরি পাচ্ছেন না। এছাড়া অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর খরচ বেশি হলেও সে তুলনায় শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে মো. শহীদুল আলম (এনডিসি) বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশের শ্রমবাজারে ২২ লাখ কর্মক্ষম মানুষ যুক্ত হলেও প্রায় সাত লাখ শ্রমিক কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশ গমন করন। কিন্তু দক্ষ শ্রমিক কম। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় কর্মসংস্থানের বিষয়টি যুক্ত করার ওপর জোর দেন তিনি।
নজরুল ইসলাম খানও তার বক্তব্যে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণে সরকারকে এখনই মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।
: বণিক বার্তা