ভারতের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয়া দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা হিসেবে ১৪শ ৫০ (এক হাজার চারশ পঞ্চাশ) মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গতকাল সোমবার (১৪ই সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইলিশের প্রথম চালান বেনাপোল বন্দরে এসে পৌঁছায়। এরপর কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে প্রথম চালান হিসেবে ১২ মেট্রিক টন ইলিশ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে রফতানি করা হয়। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাকি ইলিশ ভারতে যাবে। কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আকসির উদ্দীন মোল্লা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শুল্ক মুক্ত সুবিধায় যাচ্ছে এ ইলিশ। প্রতি কেজি ইলিশের রফতানি মূল্য ধরা হয়েছে ১০ ডলার দরে মোট ১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি করা হবে।। এই দরে রপ্তানি করা প্রতিটি ইলিশের সাইজ হবে এক কেজি থেকে ১২শ’ গ্রাম ওজনের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া ও পরিবেশগত সমস্যার কারণে দেশে ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের পহেলা অক্টোবর থেকে দেশের বাইরে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও গত বছরে দুর্গা পূজাতে বাংলাদেশ সরকার ভারতে ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ দেয়।
জানা গেছে এবার ইলিশ ভারতে রফতানির জন্য বাংলাদেশি ৯টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ১৫০ থেকে ১৭৫ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের জেকে এন্টারপ্রাইজ। এর সিএন্ডএফ এজেন্ট বেনাপোলের নীলা এন্টারপ্রাইজ। এর মধ্যে প্রথম দিনে রফতানিকারক জাহানাবাদ সি ফুডস লিমিটেড দুটি ট্রাকে করে ১২ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে পাঠালো।
ইলিশের প্রথম চালান যেতে না যেতেই পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেল। সোমবার বিকেলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। ফলে বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আটকা পড়েছে পেঁয়াজভর্তি প্রায় দেড়শ ট্রাক। এদিন সকালে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০ টন পেঁয়াজ ঢোকার পরপরই দেশের সবগুলো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিকারকদের সংগঠন। ভারতের পেট্রাপোল রপ্তানিকারক সমিতির পক্ষে ব্যবসায়ী কার্তিক ঘোষ বলেন, আমদানি বাণিজ্য শুরুর পর থেকে ২৫০ ডলারে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছে। কিন্তু বন্যার কারণে ভারতের নাসিকে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ রপ্তানিকারকরা স্থানীয় বাজারদর হিসাবে ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলো আটকে দেয়া হয়।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, ভারত মূল্যবৃদ্ধির দাবিতে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। পারস্পারিক বাণিজ্যে সমঝোতার বিকল্প নেই। রপ্তানি বন্ধ না করে পেঁয়াজের আমাদানিকারকদের তারা সময় বেধে দিতে পারতেন। হঠাৎ নেয়া এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন এপারের আমদানিকারকরা।
ভারতের হিলির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শংকর দাস পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে বলেন, সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যার ফলে ভারতের বাজারেই পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে রপ্তানি বন্ধে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ভারত সরকার হিলি কাস্টমসে নির্দেশনা দিয়েছে। সে মোতাবেক কাস্টমস কতৃপক্ষ জানিয়েছেন, আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে। তিনি আরও জানান, এ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন খুব শীঘ্রই জারি হবে। একইসঙ্গে পেঁয়াজ আমদানির জন্য যেসব এলসি খোলা রয়েছে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সেগুলোর বিপরীতেও কোনো পেঁয়াজ রপ্তানি হবে না।