বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চেহারা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে কোটি মানুষের। শিল্প বিপ্লব ঘটবে দেশে। এমন সব সম্ভাবনা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে।
বাড়তি ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি আয় করতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে গড়ে উঠছে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল। বিশেষ অঞ্চল আছে বিদেশিদের জন্যও। বিদেশিদের মধ্যে ভারত, জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, হংকং, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ বিনিয়োগ করবে শত শত বিলিয়ন ডলার। এ কাজ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশাপাশি সরকার সারাদেশে ১২টি হাইটেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। পার্কগুলো তৈরির কাজ শেষ হলে সেখানে বিপুল সংখ্যক বেকারের কর্মস্থানের ব্যবস্থা হবে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানও এসব পার্কে কাজের সুযোগ পাবে। সরকার আশা করছে, ২০৩০ সাল নাগাদ এসব হাইটেক পার্ক থেকে এক হাজার (১০ বিলিয়ন) কোটি ডলারের সফটওয়্যার ও সেবা রফতানি করা সম্ভব হবে। ২০২০ সালের মধ্যে যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলার। বেজা ও হাইটেক পার্কের সব কাজ মনিটরিং ও সমন্বয়ের জন্য এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বেজার কাজ যতদিন চলবে, ততদিন পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক।
একক ইউনিট হিসেবে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করা, আন্তর্জাতিক তৃতীয় পক্ষ হিসেবে স্বাধীন যাচাই ফার্মের মাধ্যমে বেজা ও হাইটেক পার্ক প্রকল্পের কার্যক্রম মনিটর করা হবে। প্রকল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ, বাস্তবায়ন পরিবেশ, পরিদর্শন, কর্মশালা ও সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করা হবে। প্রকল্প উপদেষ্টা কমিটির সচিবালয় হিসেবে দায়িত্ব পালন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করা হবে। প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকে অর্থ উত্তোলনের আবেদন প্রেরণ, অর্থ আহরণ, অর্থের ব্যবহার ও নিরীক্ষা কাজের সমন্বয় করা হবে। বিশ্বব্যাংকে প্রকল্পের অগ্রগতি পাঠানো হবে। বেজা ও হাইটেক পার্ক কাজের অগ্রগতি ও তদারকিতে সব সময় পাশে থাকবে সংস্থাটি।
সেন্ট্রাল কো অর্ডিনেশন ইউনিট অব দ্যা প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল ইন্টারপ্রেনারশিপ প্রজেক্টের (সিসিইউ-প্রাইড) প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়নে ২৫ কোটি ৮ লাখ টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রাথমিকভাবে চলতি সময় থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশ্বব্যাংক উইং। প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করা ও বাস্তবায়ন গতি ত্বরান্বিত করতেই এমন উদ্যোগ।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বব্যাংক) শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, বেজা ও হাইটেক পার্কে নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে, কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কের কাজের অভিজ্ঞতা নতুন। এসব কাজ মনিটরিং ও সমন্বয়ে বিশ্বব্যাংক আমাদের সহায়তা করবে। এজন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, যার অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কের কাজ হচ্ছে, অভিজ্ঞতার জন্য সেসব দেশে আমাদের লোক পাঠানো হবে। এক কথায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কের কাজ সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে টেকনিক্যাল সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক।
প্রকল্পের আওতায় আরো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় ও পরিবীক্ষণ করা হবে। একটি একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফান্ড, ডিসবার্সমেন্টসহ বিশ্বব্যাংককে পরিবীক্ষণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতির প্রতিবেদন দেওয়া হবে। জাতীয় সংসদ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্টেকহোল্ডারকে প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকল্প সম্পর্কে ব্রিফ করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইআরডি’র প্রস্তাবিত প্রকল্পে কিছু সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পের আওতায় ফার্নিচার ও কম্পিউটার কেনার কথা উল্লেখ করা হলেও এর সংখ্যা ও টাকার পরিমাণ ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়নি। বৈদেশিক সেমিনার কোন দেশে হবে, কেন হবে এবং তাতে কি পরিমাণ ব্যয় হবে, সে বিষয়েও কিছু উল্লেখ নেই। প্রকল্পের আওতায় নানা ক্রয় পদ্ধতি নির্দিষ্ট নয়।
তবে সভা করে কিছু কিছু ব্যয় সুনির্দিষ্ট করেছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর বিবেচনায় গাড়ি ভাড়া বাবদ ১ কোটি ১৯ লাখ, আউটসোর্সিং ৪১ লাখ, অন্যান্য ভাতা ২৫ লাখ, সেমিনার ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ৩ কোটি ৪২ লাখ, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ বাবদ ১০ লাখ ২০ হাজার যৌক্তিকভাবে ব্যয় করা যেতে পারে।