গার্মেন্ট মালিকরা সুবিধা আদায়ে সরকারের সঙ্গে শুধু দরকষাকষিই নয়, অর্থ পাচারেও শীর্ষে রয়েছেন তারা। ফলে ব্যাক টু ব্যাক এলসি বা ঋণপত্রের মাধ্যমে অর্থ পাচার থামছে না। পাচারের অর্থে উন্নতবিশ্বে ‘স্বর্গ’ গড়ে তুলেছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। দেশেও তাদের ক্ষমতার প্রদর্শনী চলছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যারা দেশের উন্নয়নে শিল্প-কারখানা স্থাপন করছেন, তারা অর্থ পাচার করেননি। কিন্তু অনেক পোশাকশিল্প মালিক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার আড়ালে অর্থ পাচার করছেন।
এভাবেই জনগণের দেওয়া করের ৩৬ শতাংশ পরিমাণ টাকাই পাচার হয়। বর্তমানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশ থেকে অর্থ পাচার ১৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি-জিএফআই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক গতকাল বলেন, পোশাকশিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। তবে নতুন বাজেটে অর্থ পাচার রোধে ৫০ শতাংশ কর আরোপ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান মালিকদের এই শীর্ষ নেতা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর, শুল্ক গোয়েন্দা ও বন্ড কমিশনারেট সূত্র জানায়- শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালানের শীর্ষে রয়েছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। তারা বন্ডের অপব্যবহার করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রি করছেন। সেই অর্থই আবার পাচার করছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকায় এই পোশাকশিল্প মালিকদের পণ্য আমদানি ও রপ্তানি খুব একটা অডিট হয় না। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালেও অর্থ পাচার হচ্ছে। শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে চোরাকারবারিতে জড়িত এসব পোশাকশিল্প কারখানার বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির একাধিক প্রমাণও রয়েছে। কিন্তু অ্যাকশন নিতে গিয়ে শক্তিশালী বিজিএমইএ সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে কর গোয়েন্দা বিভাগও অর্থ পাচারকারী পোশাকশিল্প মালিকদের আয়কর ফাইল খুব একটা খতিয়ে দেখছে না। সব মিলিয়ে বাধাহীনভাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভয়ঙ্কর লুটপাট চালিয়েও পোশাকশিল্পের মাফিয়ারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। এ নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা অবিলম্বে এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের তৎপরতা দাবি করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের সহায় সম্পদের খোঁজ নিতে গেলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। দেশে-বিদেশে তাদের সম্পদ-প্রাচুর্যের অভাব নেই। মাফিয়া চক্রের টাকা পাচার প্রক্রিয়ায় দেশের হুন্ডি বাণিজ্য সচল থাকারও অভিযোগ তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ গতকাল বলেন- তৈরি পোশাকশিল্প-কারখানার অনেক মালিক অর্থ পাচার করছেন। অর্থ পাচারকারী এই পোশাকশিল্প মালিকদের ধরতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়োজনে কানাডার বেগমপাড়ায় গিয়ে এই অর্থ পাচারকারীদের ধরতে হবে। খ্যাতনামা এই অর্থনীতিবিদ বলেন- পোশাকশিল্প মালিকদের অনেকেরই মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান আছে। এই মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে অর্থ পাচার করছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। এদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান এবং পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার পরামর্শও দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক লিমিটেডের এই চেয়ারম্যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ গতকাল বলেন- প্রতি বছর আমাদের ধনীক শ্রেণি অর্থ পাচার করছে। এর বড় মাধ্যম আমদানি মূল্য বেশি দেখিয়ে অর্থ পাচার। আবার রপ্তানি মূল্য কম দেখিয়ে অর্থ পাচার। এক্ষেত্রে প্রকৃত রপ্তানি আয় দেশে আসছে না। অর্থ পাচার ঠেকাতে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে প্রকৃত মূল্য ঘোষণার ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। যদিও রাষ্ট্রীয়ভাবে এগুলো চিহ্নিত করার পরও অর্থ পাচারকারীদের শাস্তি হয় না। কিন্তু দেশে সুশাসন থাকলে শাস্তি হওয়া দরকার। খ্যাতনামা এই অর্থনীতিবিদের মতে- এই অর্থ পাচারকারীরা বিদেশে সম্পদ সৃষ্টি করছেন। সে অর্থ সম্পর্কে জানা দরকার। দেশ-বিদেশে তাদের সম্পদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর গতকাল বলেন- এ ধরনের অর্থ পাচার নির্মমভাবে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বারবার এ ধরনের তথ্য নির্দেশ করছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট- বিএফআইইউ, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়, এনবিআরের কর গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের দৃশ্যমান কার্যকারিতা লক্ষণীয় নয়। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা গেলে একদিকে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়বে, অন্যদিকে কর রাজস্বও বাড়বে।
জানা গেছে- দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা পুনঃ রপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধায় পণ্য আমদানির সুবিধা পান। কিন্তু সেই সুবিধার অপব্যবহার করে তাদের অনেকেই চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছেন। খোলা বাজারে বিক্রি করছেন পণ্য। আবার তৈরি পণ্য রপ্তানি করেই প্রকৃত আয় দেশে আনছেন না। এভাবেই আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারের শীর্ষে রয়েছেন পোশাকশিল্প মালিকরা।
ঢাকায় ‘ডেলিভারিং এসডিজি ইন বাংলাদেশ : রোল অব নন স্টেট অ্যাক্টরস’ শীর্ষক সভায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘এসডিজির চার বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি-জিএফআই বলেছে- আমদানি ও রপ্তানির আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতি বছর যে ভয়াবহ আকারে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে এটি ১৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থ পাচারের এই প্রবণতা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত করবে।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা-আঙ্কটাড স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) নিয়ে গত বছর ২০ নভেম্বর প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে- আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে সিংহভাগ অর্থ পাচার হয়। গত চার বছরে টাকা পাচারের পরিমাণ আরও বেড়েছে। বাংলাদেশে বছরে যত টাকা কর আদায় হয়, তার ৩৬ শতাংশের সমান টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। ২০১৫ সালে কী পরিমাণ কর আদায় হয়েছিল, তা বিবেচনা করে অর্থ পাচারের হিসাব করেছে আঙ্কটাড। সংস্থাটি বলছে- আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের মাধ্যমে করফাঁকি রোধ করা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বাণিজ্য হয়, এর ৭ শতাংশের সমপরিমাণ মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে হয়। আঙ্কটাডের পক্ষে ওই প্রতিবেদনটি ঢাকায় প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন- টাকা পাচারের ৮০ শতাংশই হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে। টাকা পাচার রোধ করা গেলে কর আহরণ আরও বাড়ত। ওই টাকা দেশেই বিনিয়োগ হতো। খ্যাতনামা এই অর্থনীতিবিদের মতে- বেশি দামের জিনিসকে কম দাম দেখিয়ে পাঠানো হচ্ছে এবং সেটার ভিত্তিতে কম টাকা দেশের ভিতরে আসছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত দাম দেখিয়ে রপ্তানি করা হলেও টাকা আদৌ দেশের ভিতরে আসেনি। অনেক সময় পণ্য আমদানি-রপ্তানির ঘোষণা থাকলেও বাস্তবে খালি কনটেইনার আসা-যাওয়া করেছে, এমন উদাহরণও রয়েছে।
জানা গেছে- বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার আড়ালে সংঘবদ্ধ চক্র প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকা লুটপাট করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লুটের সিংহভাগ অর্থই পাচার হচ্ছে বিদেশে। বন্ড লুটেরা মাফিয়া গ্রুপের অপরাধ-অপকর্ম কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। পোশাকশিল্প মালিকরা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প খাতকে জিম্মি করে সব সুবিধা চুষে নিচ্ছেন, লুটে নিচ্ছেন পুঁজির টাকা। চিহ্নিত এ মাফিয়া চক্রের বেশুমার প্রভাবের কাছে কাস্টমস, পুলিশ, ব্যবসায়ী মহল থেকে শুরু করে শিল্প-বাণিজ্য খাতের নীতিনির্ধারকরা পর্যন্ত ধরাশায়ী হয়ে পড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করতেও সাহস পাচ্ছেন না কেউ। বন্ড অপব্যবহারবিরোধী অভিযানকারী কাস্টমস কর্মকর্তাকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো দাপটও দেখিয়েছে ওই মাফিয়া চক্রটি। এভাবেই বছরের পর বছর অজ্ঞাত ক্ষমতার জোরে সবাইকে জিম্মি করে তারা যা ইচ্ছা তাই করে চলছেন। এতে করে কাগজ, কাপড়, প্লাস্টিকসহ দেশীয় শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ধ্বংস হতে চলেছে গোটা শিল্প খাত। সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার। সবকিছুই চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। তারা দেখেও না দেখার ভান করে রাষ্ট্রীয় লুটপাটের বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে শুল্ক গোয়েন্দা ও বন্ড কমিশনার করেনটা কী-তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে ব্যবসায়ী মহলে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা কাস্টসম বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার ড. এস এম হুমায়ূন কবির গতকাল বলেন- বন্ডের পণ্যে শুল্ক ফাঁকি হচ্ছে। পোশাকশিল্প মালিকরা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কাপড় বিক্রি করছেন। এসব শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে সামনে বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ব্যাপক পরিমাণে সুতা ও কাপড় খোলা বাজারে বিক্রি হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা আসছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মবিনুল কবীর গতকাল বলেন- অর্থ পাচার প্রতিরোধে কাজ করছে শুল্ক গোয়েন্দা। তার মতে- দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ী ভালো। এর মধ্যে কিছু কিছু গার্মেন্ট মালিক আছেন, যারা শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে খোলা বাজারে বিক্রি করেন। এখন তাদের ধরব।
জানা গেছে- শুল্ক ও কর ফাঁকিবাজ এবং অর্থ পাচারকারী ওইসব পোশাকশিল্প মালিকের বিরুদ্ধে মালিকপক্ষ বিজিএমইএকে অ্যাকশন নিতে বলেছে এনবিআর। একই সঙ্গে বন্ড লাইসেন্স প্রাপ্ত পোশাক কারখানাসমূহের আমদানি করা কাঁচামাল সঠিকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করা ও সরকারের প্রতিরোধমূলক কর্মকান্ডে বিজিএমইএর সহযোগিতাও চেয়েছে এনবিআর। বন্ড সুবিধায় আমদানি হওয়া গার্মেন্ট পণ্যের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিজিএমইএর সহযোগিতা চেয়ে গত বছর ৩ অক্টোবর দেওয়া পত্রে এসব কথা বলেছে এনবিআর। পত্রে বলা হয়- ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ও বিজিএমইএর পত্রসমূহ পর্যালোচনা করেছে এনবিআর। এতে ৬৩টি পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধা অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণে বিজিএমইএকে অনুরোধ করা হয়।
ওই পত্রের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক গত ৯ অক্টোবর এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া পত্রে বলেছেন- বিজিএমইএ বন্ড লাইসেন্স পাওয়া পোশাক কারখানাসমূহের আমদানি হওয়া কাঁচামাল সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সব কর্মকান্ডে সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করছে। বন্ড সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির মাধ্যমে সমাধান করা শ্রেয় হবে।
জানা গেছে- শুল্কমুক্ত পণ্য চোরাচালানে বিক্রির সঙ্গে জড়িত ৬৩টি পোশাক কারখানার প্রায় সবগুলোই কালোবাজারে পণ্য বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা ছাড়াও কারও কারও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থগিত করেছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। তালিকায় অভিযুক্ত এমন ১০টি প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের একাধিকবার কালোবাজারে পণ্য বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরা হয়েছে। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীও সরব। বন্ডেড সুবিধায় মালামাল এনে তা কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়ায় এবং স্থানীয় বস্ত্রশিল্পের প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রীও নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে- বন্ডেড সুবিধায় আনা পোশাক শিল্পের কাঁচামালের শুল্ক-করের পরিমাণ প্রকারভেদে ৬০ শতাংশ থেকে ১১০ শতাংশ কিংবা তার চেয়েও বেশি হারে পরিশোধ করতে হয়। চোরাকারবারিতে জড়িত পোশাক কারখানা প্রতিষ্ঠানগুলোর শুল্ক করফাঁকির তথ্যও এনবিআর বিজিএমইএর কাছে পাঠিয়েছে। এতে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিস ১৬টি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি ধরেছে, যার মাধ্যমে ৩৫ কোটি ৩১ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগ ১২টি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম উদঘাটন করে ২৭৫ কোটি টাকা আদায় করেছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ১টি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম উদঘাটন করে ১৩ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করেছে। চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে যাতে রাজস্বের পরিমাণ ৪৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঢাকা কাস্টম হাউস ৩টি, বেনাপোল কাস্টম হাউস ৮টি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি চিহ্নিত করেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি- জিএফআই সর্বশেষ গত ৩ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে- বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বাণিজ্যের আড়ালে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। যা মার্কিন মুদ্রায় হিসাবে গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।
:বাংলাদেশ প্রতিদিন