প্রাণঘাতী করোনা আক্রান্ত বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য আগামী বাজেটে ‘বিশেষ পলিসি সাপোর্ট’ প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। তাছাড়া কোনো ব্যবসায়ী যদি তার শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে চান, সে জন্য বাজেটে ‘এক্সিট পলিসি’ চান তারা।
উদ্যোক্তাদের মতে, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব বাজারের চাহিদা ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়ে আসবে। এর ফলে মূল্য কমে আসবে পণ্যের। দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে রপ্তানির বিপরীতে অন্তত ২ বছরের জন্য রপ্তানি মূল্যের ওপর সরাসরি ১০ শতাংশ নগদ সহায়তার প্রয়োজন। এটা ছাড়া বিশ্ববাজারে টিকে থাকার জন্য এ মুহূর্তে অন্য কোনো বিকল্প নেই।
তারা বলছেন, ফায়ার ডোর, ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম ও পাম্প, ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে এর রেয়াতি হারে শুল্ক সুবিধা পাওয়া গেলেও এর প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি সুবিধা না দিয়ে ৩৯-৩৫%, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি শুল্ক ধার্য করা হচ্ছে। রপ্তানির জন্য বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক দ্রব্যাদির নগদ ক্রয়কৃত মূল্যের ওপর উৎসে কর বা ভ্যাট ধার্য করার বিধান থাকায় উদ্যোক্তারা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ বিধানগুলো রহিত করে রপ্তানিমুখী শিল্পকে সকল প্রকার ভ্যাট থেকেও অব্যাহতি দিতে হবে।
এ বিষয়ে বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এবং ইএবির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনা সংকটে বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য আসছে বাজেটে \’বিশেষ পলিসি সাপোর্ট\’ প্রয়োজন।
বিশেষ পলিসি সাপোর্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, সেই পলিসির যাত্রা আজকের প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে ১৯৯৭ সালে শুরু হয়েছিলো। আর সে কারণে আজকের পোশাক খাত বিশেষ করে নিটওয়্যার খাত শক্তিশালী হয়েছে। সেই পলিসির সুদূর প্রসারিত সিদ্ধান্তটি ছিলো, ‘দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে রপ্তানির বিপরীতে ২৫ শতাংশ নগদ সহায়তা।
করোনার কালে এ ভয়াবহ সঙ্কটে আবারও সেই পলিসি সাপোর্ট প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আগামী বাজেটে যুক্ত করার জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তার প্রস্তাবনার মধ্যে ছিলো- দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে রপ্তানির বিপরীতে অন্তত ২ বছরের জন্য রপ্তানি মূল্যের ওপর সরাসরি ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কাঁচামাল ব্যবহার করে রপ্তানির বিপরীতে ৪ শতাংশ নগদ সহায়তার ব্যবস্থা করা।
এক্সিট পলিসি: করোনার কারণে বিশ্বে আগামী এক বছর বহু শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে অনেক উদ্যোক্তা। তাদের নিরাপদ প্রস্থানের দিক নিদের্শনা থাকতে হবে এবারের বাজেটে। বরাদ্দ রাখতে হবে একটা টাকার অংক, এটা খুব জরুরি।
এআইটি: প্রত্যাশিত রপ্তানি মূল্যের ওপর বর্তমানে এআইটি হিসেবে শূন্য দশমিক ২৫% ধার্য রয়েছে, তা অবশ্যই চূড়ান্ত আয়কর হিসেবে আগামী এক বছর বহাল রাখতে হবে। নগদ সহায়তার ওপর ৫% কর প্রত্যাহার করতে হবে।
ভ্যাট থেকে রপ্তানিমূখী শিল্পকে অব্যাহতি: পলিসিতে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রতিমাসে শূন্য হারে রিটার্ন দাখিল করার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ আমাদের জানা নেই। এ পর্যন্ত এর যুক্তিসঙ্গত কারণ পাইনি। তাছাড়া রপ্তানির জন্য বিভিন্ন আনুসঙ্গিক দ্রব্যাদির নগদ ক্রয়কৃত মূল্যের ওপর উৎসে কর বা ভ্যাট ধার্য করার বিধান থাকায় উদ্যোক্তারা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ বিধানগুলো রহিত করে রপ্তানিমুখী শিল্পকে সকল প্রকার ভ্যাট থেকেও অব্যাহতি দিতে হবে।
ফায়ার সেফটির যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা: বিভিন্ন ফায়ার সেফটি উপকরণ, যেমন ফায়ার ডোর, ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম ও পাম্প, ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে এর রেয়াতি হারে শুল্ক সুবিধা পাওয়া গেলেও এর প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি সুবিধা না দিয়ে ৩৯-৩৫%, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি শুল্ক ধার্য করা হচ্ছে। ফায়ার সেফটির সকল যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া উচিত।
শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ ও সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা: তৈরি পোশাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাজেটে বিশেষ তহবিল জরুরি। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে শ্রমিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।